ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে চলছে দেশের দুই পুঁজিবাজার

Date: 2023-07-19 17:00:08
ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে চলছে দেশের দুই পুঁজিবাজার
দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছাড়া কার্যক্রম চালিয়ে আসছে কয়েক মাস ধরে। এসময় ডিএসই ১০ মাস ও সিএসই আট মাসের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত এমডির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত বছর সিএসইতে এমডি থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উর রশিদকে দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত করা হয়। এরপর একই বছরের আগস্ট মাসে পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে পদত্যাগ করেন ডিএসইর এমডি। এতে ডিএসইর এমডি ১৩ মাস ও সিএসইর এমডি আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করেন। সেই সঙ্গে সিএসইর সঙ্গে নিয়োগ পাওয়া ডিএসইর আরেক এমডিও এর মাঝে পদত্যাগ করেন। ফলে এমডিদের পদত্যাগ ও পর্ষদ এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে কোনো যোগ্য ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান দুটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর এ কারণে দফায় দফায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ও সাক্ষাৎকার নিয়েও কয়েক মাস ধরে এমডি নিয়োগ দিতে পারছে না স্টক এক্সচেঞ্জ দুটি।তথ্যমতে, সিএসইর এমডির সঙ্গে ডিএসইতে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান কাজী সানাউল হক। এরপর একই বছরের ৮ অক্টোবর মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। পরে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত এমডি দ্বারা পরিচালিত হয় ডিএসই। আবার একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি ও সাক্ষাৎকার নেয়ার পর ২০২১ সালের ২৫ জুলাই তিন বছরের জন্য এমডি হিসেবে নিয়োগ পান তারিক আমিন ভুঁইয়া। কিন্তু তিনিও পারেননি মেয়াদ শেষ করতে। এর আগেই নিয়োগের ১৩ মাস পর ২০২২ সালের আগস্টে পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে পদত্যাগ করেন তিনি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে চলছে ডিএসই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছ থকে কয়েক দফা নিয়োগের সময় বাড়িয়েও খুঁজে পাইনি যোগ্য এমডি। এ সময় এমডি খুঁজে পেতে কয়েক দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এবং সাক্ষাৎকার নিয়ে পর্ষদের মনোনীত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে ডিএসই।অপরদিকে ডিএসইর এমডির সঙ্গে ৯ ফেব্রুয়ারি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি মামুন-উর-রশিদ সিএসইতে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সিআইবি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সমস্যা এবং সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তার আসামি হওয়া এবং এমডি পদের প্রভাব খাটিয়ে মামুন-উর-রশিদসহ তার পরিবারের সদস্যরা সিএসইর তিনটি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সিএসই পর্ষদ মামুন-উর-রশিদকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিনই তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে তাকে এমডি পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর দুর্নীতির দায়ে জেলেও যান তিনি। এরপর থেকেই এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিএসই। এমডি নিয়োগে সিএসইও বিএসইসির কাছ থেকে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। সেই সঙ্গে কয়েক দফা বিজ্ঞপ্তি ও পর্ষদ মনোনীত তালিকা দিয়েও এখনও খুঁজে নিতে পারেনি যোগ্য এমডি। এমডি শূন্য হওয়ার পর থেকে সিএসইর ও বাজারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্টক এক্সচেঞ্জে স্থায়ীভাবে একজন এমডি না পাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পরিচালন কার্যক্রম। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান দুটি বাজারে কতটা অবদান রাখতে পারবে, তা তাদের ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলার অবস্থা থেকেই বোঝা যায়। প্রতিষ্ঠান দুটিতে পর্ষদে থাকা ব্যক্তিদের চাহিদা পূরণ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিল না হওয়ায় এমডি হিসেবে থাকতে পারছেন না কেউ। আর এতে স্টক এক্সচেঞ্জেরই করপোরেট গভর্ন্যান্স প্রশ্নবিদ্ধ। যেখানে স্টক এক্সচেঞ্জের সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শতভাগ সুশাসন কীভাবে নিশ্চিত হবে? তার হচ্ছে প্রাইমারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তাই তাদের সুশাসন ও শৃঙ্খলা আগে নিশ্চিত করতে হবে। বিএসইসি শুধু তালিকাভুক্ত কোম্পানি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিতে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের স্টক এক্সচেঞ্জের সুশাসনও নিশ্চিত করতে হবে। তাই এ বিষয়ে কমিশনের আরও কঠোর নজরদারি ও পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তারা।এছাড়া দেখা যায়, পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ডিএসইর সবশেষ এমডি তারিক আমিন পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগের কারণ হিসাবে জানা যায়, তিনি ই-মেইলে ডিএসইর তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমানের কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠান। সেখানে তিনি দেড় পৃষ্ঠার একটি পদত্যাগপত্র পাঠান। যেখানে তিনি যা লিখেছেন, তার সারমর্ম হলো যেভাবে তিনি কাজ করতে চাচ্ছিলেন, সেভাবে তিনি কাজ করতে পাচ্ছেন না। তাই এ অবস্থায় তিনি আর সংস্থাটির এমডির দায়িত্বে থাকতে চাচ্ছেন না।’তবে জানা যায়, সে সময় ডিএসইর প্রায় ৯৫ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি দিয়ে সংস্থাটির ভেতরেই চাপে পড়েন তারিক আমিন ভূঁইয়া। একটি পক্ষ তার দেয়া এ পদোন্নতির আইনগত বৈধতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ অবস্থায় তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে তার আগের এমডি কাজী সানাউল হকের পদত্যাগের বিষয়ে জানা যায়, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পারিবারিক কারণ দেখিয়ে তিনি সে সময় পদত্যাগ করেছেন। তবে এর কিছুদিন পরই তাকে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর জানা যায়, সে সময় কিছু বিষয় নিয়ে পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই তিনি পদত্যাগ করেন।এদিকে এই দীর্ঘসময় সিএসইর পরিচালনা পর্ষদসহ ম্যানেজমেন্টে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সিএসইর লেনদেনসহ কোথাও কোনো উন্নতি হয়নি। এখনও ডিএসই’র শীর্ষ এক ব্রোকারের থেকে সিএসইর মোট লেনদেন কম হয়।সিএসইর এক ট্রেকহোল্ডার শেয়ার বিজকে বলেন, সিএসইতে এক বছর ধরে এমডি নেই। ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে চলে কাজ। অনেক পরিচালক ও স্বাধীন পরিচালক আছেন, তাদের বাজারের সঙ্গে ন্যূনতম অংশগ্রহণ নেই। এমনকি তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান পুঁিজবাজারের তালিকাভুক্ত নয়। সর্বশেষ যিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি দুদকের মামলার আসামি। পর্ষদ তাকে কীভাবে এমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল? তার তো পুঁজিবাজারের কোনো জ্ঞানই ছিল না। শুধু ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে সুদ আয় করা ছিল তার অভিজ্ঞতা। এছাড়া ঢাকায় অফিস থাকার পরও নিকুঞ্জে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে অফিস করা হয়। সুতরাং তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। অন্যদিকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী এখনও পুরো টাকা পরিশোধ করেননি। এমনকি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর কোনো লক্ষ্য দেখছি না।এ বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, এমডি নিয়োগের বিষয়ে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ বিষয়টি দেখার জন্য পর্ষদ ও এনআরসি কমিটি আছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আমার কোনো মতামত নেই।এত সময়েও যোগ্য ব্যক্তি কেন পাওয়া যাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো ব্যক্তিগত মতামত নেই। বিষয়টি দেখার জন্য পর্ষদ আছে। বাছাই কার্যক্রম চলমান আছে। যখন যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে তখন জানা যাবে। তাই বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। এ বিষয়ে সিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহেদি হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, স্থায়ীভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের কাজ চলমান আছে। এর মধ্যে একজনের নিয়োগ চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু পরে বোর্ড স্থগিত করে দেয়। পরে আবারও ইন্টারভিউয়ের জন্য সময় দেয়া হয়। এ কারণে একটু সময় লাগছে।

Share this news