ভালোর প্রত্যাশা ও শঙ্কা নিয়ে শুরু হচ্ছে নতুন বছর

Date: 2022-12-31 16:00:13
ভালোর প্রত্যাশা ও শঙ্কা নিয়ে শুরু হচ্ছে নতুন বছর
সদ্যসমাপ্ত ২০২২ সালের শুরুতে দেশের পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেন ছিল বেশ আশাজাগানিয়া। ৭ হাজার পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক সীমা পেরোনোর পাশাপাশি লেনদেন ছাড়িয়েছিল হাজার কোটি টাকা। তবে ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই পাল্টে যায় পুঁজিবাজার পরিস্থিতি। সূচকের ক্রমাগত পতন ঠেকাতে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সব মিলিয়ে হতাশাজনক একটি বছর পার করেছেন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। নতুন বছরেও পুঁজিবাজারের জন্য তেমন কোনো সুখবর নেই। ফলে ভালোর প্রত্যাশা ও শঙ্কা নিয়েই নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার।সদ্য সমাপ্ত বছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৮ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে। ২০২১ সালের শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৭৫৬ দশমিক ৭০ পয়েন্টে। ২০২২ সাল থেকে এটি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২০৬ দশমিক ৮ পয়েন্টে। এ সময়ে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন কমেছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। বিদায়ী বছরে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ কমে ৯৬০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এক্সচেঞ্জটিতে এ সময়ে পাট, ভ্রমণ ও অবকাশ, কাগজ ও মুদ্রণ, সিরামিক, বস্ত্র এবং সেবা ও আবাসন খাত বাদে বাকি সব খাতেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক বিদায়ী বছরে এর আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কমে ১০ হাজার ৯৮২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এক্সচেঞ্জটির সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ২০২২ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩২৮ পয়েন্টে।নতুন বছরে দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বিশ্লেষক ও বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের মতে, আগের বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালেও পুঁজিবাজারে অস্থিরতা থাকবে। বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি ও চলতি অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যাবে এমব পূর্বাভাসের প্রভাব বাজারেও পড়বে। ডিএসইর সূচক সাড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজারের মধ্যে থাকবে এবং দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে ওঠানামা করবে বলে আভাস দিয়েছেন তারা। মূলস্ফীতির চাপ, সুদের হার বৃদ্ধি ও মুদ্রাবাজারের তারল্য সংকটের মতো বিষয়গুলোর কারণে পুঁজিবাজার নিয়ে এ বছরও বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বাড়ার প্রভাবে উৎপাদন খাতের কোম্পানিগুলোর আয় ও মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থনীতিতে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতির কারণে নির্মাণ, ইলেকট্রনিকস ও অটোমোবাইলের মতো খাতের ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করবে। ঋণপত্র (এলসি) ও আমদানি বিল ইস্যুর পরিমাণ কমে আসার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ হাতে পেলে এ বছরের শেষের দিকে অর্থনৈতিক চাপ কিছুটা হলেও লাঘব হবে। এতে পুঁজিবাজারেও কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তাছাড়া বাজার স্থিতিশীলতায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ধরনের নীতি ও কৌশল পরিলক্ষিত হবে। এ বছরে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ), অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড ও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এগুলো চালু হলে বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওকে আরো বৈচিত্র্যময় করার সুযোগ পাবেন। ভালো মৌল ভিত্তির বহুজাতিক কোম্পানি, ওষুধ খাত এবং ভালো সুশাসন রয়েছে এমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চ্যালেঞ্জের মধ্যে ভালোভাবেই টিকে থাকবে। অবশ্য এ সময়ে সিমেন্ট, প্রকৌশল ও বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বছরের শেষের দিকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশাবাদের সঙ্গে সঙ্গে পুঁজিবাজারেও গতি ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা তাদের।ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবই প্রতিফলিত হচ্ছে পুঁজিবাজারে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজার কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে তারল্য সংকট রয়েছে এবং পুঁজিবাজারেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সামনে একটি সংকটকাল আসতে যাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে কোনো লাভ হয় না, বরং ক্ষতিই বেশি। আমাদের ধৈর্যের সঙ্গে এটি মোকাবেলা করতে হবে। আপত্কালীন পরিস্থিতিতে যাতে দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার ধরে রাখা যায় এজন্য যতটা সম্ভব ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনার কাছে যদি ভালো শেয়ার থাকে তাহলে দীর্ঘমেয়াদে সেটি আপনাকে মুনাফা দেবেই। আরেকটি বিষয় বিনিয়োগের অন্যান্য খাতে যখন মন্দা দেখা যায় তখন কিন্তু পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা যায়। করোনার সময়ে সারা বিশ্বেই এটি দেখা গেছে। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে অনেকেই পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাই পুঁজিবাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়াটাই সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি।’

Share this news