তথ্য ঘাটতি ও সন্দেহজনক লেনদেন এমারাল্ড অয়েলের

Date: 2022-10-30 17:00:21
তথ্য ঘাটতি ও সন্দেহজনক লেনদেন এমারাল্ড অয়েলের
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন জানায়। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির আবেদনে বেশ কিছু তথ্যে ঘাটতি রয়েছে এবং একাধিক নগদ লেনদেন সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে বিএসইসির কাছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে এবং অনুমোদন পেতে কোম্পানিকে ব্যাখ্যা ও বেশ কিছু নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। কোম্পানিটি তা করতে ব্যর্থ হলে আবেদন বাতিল হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানিয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছে কমিশন। সেইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই-সিএসই) অবহিত করা হয়েছে। চিঠিটি পাঠানোর ৩০ দিনের মধ্যে কোম্পানির অবস্থান ব্যাখ্যা ও নথি জমা দিতে বলা হয়েছে।বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধিতে কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, কোম্পানির গত পাঁচ বছরের অস্থায়ী আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রয়োজন রয়েছে এবং তা জমা দিতে হবে। কোনো পক্ষের সঙ্গে কোম্পানির কোনো স্থগিত মামলা থাকলে তার স্পষ্টীকরণ বা ঘোষণার পাশাপাশি সহায়ক নথি জমা দিতে হবে। সেইসঙ্গে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে।এদিকে দেখা গেছে, কোম্পানির আগের ছয় মাসের গড় বাজারমূল্য ছিল ৩৭ টাকা ২০ পয়সা, কিন্তু আবেদনপত্রে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষে নতুন ইক্যুইটি ইস্যু করতে চায়, যার মূল্য হবে ১০ টাকা। কোম্পানিটি শেয়ার মানি ডিপোজিটকে পরিশোধিত মূলধনে রূপান্তর করবে, যা ন্যায়সংগত নয়। কারণ এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী। এই অবস্থানে ব্যবস্থাপনার ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি। এছাড়া শর্ত অনুযায়ী শেয়ারের টাকা একটি আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে হয়। কিন্তু কোম্পানির জমা দেয়া নথি অনুযায়ী শুধু একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৮২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জমা রয়েছে। অথচ কোম্পানি শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে মোট ৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টাকা দাবি করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়ে কোম্পানির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ইস্যু অব ক্যাপিটাল ২০০১ বিধিমালার সম্মতি-সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে এবং সব হালনাগাদ লাইসেন্সের কপি জমা দিতে হবে কোম্পানিকে।এছাড়া নি¤েœ উল্লেখিত বিষয়ে সহায়ক নথিসহ কোম্পানির ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে, নিবন্ধিত ঠিকানা ও পরিচালক পরিবর্তন হওয়ার তথ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ ও ব্যবসা পরিবর্তন বা নতুন ব্যবসা শুরুর তথ্য, কোম্পানির শেয়ারদরকে প্রভাবিত করে এমন তথ্য।অপরদিকে কোম্পানির পরিচালকদের সর্বশেষ বিস্তারিত তথ্য, এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদের জমা দেয়া কার্যবিবরণী জমা দিতে হবে। এদিকে কোম্পানি বলেছে, শেয়ারের অর্থ মোট ৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টাকা জমা দিয়েছে। কিন্তু জমা দেয়া ব্যাংক প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উল্লিখিত অর্থের মধ্যে মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড এমারেল্ড অয়েল লিমিটেডের অনুকূলে দুই কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঋণ হিসাবে ডাউন পেমেন্ট দিয়েছে এবং শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে জমা করেছে। এছাড়া আবেদনে উল্লেখিত ব্যাংক হিসাবে ৮২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এই জমা টাকার বিষয়ে এবি ব্যাংক থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।এদিকে কোম্পানির জমা দেয়া সম্পত্তি, কারখানা ও সরঞ্জামের জন্য অর্থপ্রদানের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দুই কোটি এক লাখ ৬২ হাজার ৩৫৮ টাকার মধ্যে ৮৮ লাখ ৯০ হাজার ৫৮ টাকার নগদ লেনদেন হয়েছে, যা প্রায় ৮৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং সন্দেহজনক প্রকৃতির। এই লেনদেন-সংক্রান্ত যথাযথ আইনি যাচাইকরণের জন্য নথি প্রয়োজন রয়েছে। সেইসঙ্গে কারখানা মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হিসাবে জমা দেয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৯৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩০ টাকার মধ্যে নগদ লেনদেন হয়েছে ৬২ লাখ তিন হাজার ৫৩০ টাকা, যা প্রায় ৬৬ দশমিক ০২ শতাংশ এবং সন্দেহজনক। এই লেনদেন-সংক্রান্ত যথাযথ আইনি যাচাইকরণের জন্য সব নথি প্রয়োজন। এছাড়া প্রধান কার্যালয় এবং কারখানার দৈনিক ব্যয়ের জমা দেয়া প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, ১ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার ৫৬৫ টাকার নগদ লেনদেন এবং সন্দেহজনক প্রকৃতির। এই লেনদেনের বিষয়ে যথাযথ আইনি যাচাইয়ের জন্য সব নথি প্রয়োজন এবং বেতন ও মজুরি হিসাবে জমা দেয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৫৮ লাখ ৭৯ হাজার ৩১১ টাকা টাকার মধ্যে নগদ লেনদেনের পরিমাণ ৫৪ লাখ ৩০ হাজার ৮৯২ টাকা, যা প্রায় ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং সন্দেহজনক প্রকৃতির। এর যথাযথ আইনি যাচাইয়ের জন্য সব নথি প্রয়োজন রয়েছে। তাই এই চিঠিটি জারির ৩০ দিনের মধ্যে কোম্পানির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে এবং ওপরের ঘাটতিগুলো দূর করার জন্য কোম্পানিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কোম্পানি ব্যর্থ হয়, তবে মূলধন বাড়ানোর জন্য কোম্পানির আবেদন বাতিল হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে জানতে শেয়ার বিজ থেকে কোম্পানিটির সচিব সাদিয়া আফরিনকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তাকে মোবাইল ফোনে মেসেজ করা হলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি।

Share this news