থেমে নেই সালমান অনুসারিরা
দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ছিলেন সালমান এফ রহমান। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক খাতে বিতর্কিত এই ব্যক্তি দেশের মানুষের কাছে দরবেশ হিসেবে পরিচিত। বিতর্কিত এই সালমানের পতন হলেও এখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বহাল রয়েছেন তার অনুসারিরা।এমনি এক প্রতিষ্ঠান সরকার মালিকানাধীন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়মে করেছে দরবেশ খ্যাত শীর্ষ ঋণ খেলাপি সালমান এফ রহমান। গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট। গ্রেপ্তার হলেও বসে নেই তার সিন্ডিকেট। বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন পদে বসতে পদোন্নতির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করছে এই সিন্ডিকেট।দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো শেয়ারবাজারের অনিয়ম খুঁজতেও তদন্ত শুরু হয়েছে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসি)। মূলত সংস্থাটির দায়িত্বে থাকা বেক্সিমকো সুকুক ইস্যু, বেস্ট হোল্ডিং আইপিও, ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে কারসাজি অনুসন্ধানের জন্য কমিশন এ উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজি ও সালমান এফ রহমান চক্রের সুবিধাভোগী আইসিবির কিছু কর্মকর্তাকে তদন্তের আওতায় না এনে উল্টো পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।জানা যায়, সালমান এফ রহমানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বেক্সিমকোর সুকুক ইস্যুতে একই সঙ্গে এসপিভি ও ট্রাস্টির দায়িত্ব পালন করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ দুটি কাজ করা প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় হলেও বেক্সিমকো ও আইসিবির দুর্নীতিবাজ ম্যানেজমেন্টের যোগসাজশে জনগণের বিপুল পরিমাণ অর্থ বেক্সিমকোর পকেটে ঢুকেছে। বেক্সিমকো সুকুক ব্যবস্থাপনার জন্য ‘এসপিভি ইউনিট’ নামে আইসিবিতে একটি আলাদা অফিস বেক্সিমকো সুকুকের টাকায় পরিচালিত হয়। যেখানে আইসিবির পরিচালনা বোর্ডের কাছের লোকদের পদায়ন হয়। এদের অন্যতম হলেন ডিজিএম গোলাম মোস্তফা, ডিজিএম মাহাবুব হাসানসহ আরও অনেকে এবং বর্তমানে এই ইউনিটের দায়িত্বে আছেন আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ বঙ্গবন্ধু পরিষদ আইসিবি শাখার সহ-সভাপতি শরিকুল আনাম দিপু।আইসিবি সূত্র জানায়, শরিকুল আনাম দিপু এমডির সহায়তায় সালমান এফ. রহমানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং গত ১৬ জুলাই আইসিবির জিএম পরীক্ষায় নিজের পদোন্নতির পথ সুগম করেন কিন্তু দেশে চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রমোশন প্রক্রিয়া আইসিবিতে আটকে যায়। বার বার বোর্ড মিটিং ডেকেও বাধার মুখে এমডি পিছিয়ে যান।সর্বশেষ সরকার পরিবর্তনের পর বোর্ডে বিষয়টি গোপনে পাস করিয়ে নিয়েছে আইসিবির এমডি চক্র। বিতর্কিত সরকারের সময়ে তাদের লোকদের পরীক্ষা গ্রহণ এবং বর্তমান সরকারের সময় তাড়াহুড়ো করে পদোন্নতি প্রদান গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে সরকার সংশ্লিষ্ট অনেকে মত দিয়েছেন। ফলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আপত্তি থাকায় এ নিয়ে পর্যালোচনা চলছে বলে জানা গেছে।সুকুকের ওছিলায় আইসিবির এমডিসহ তার কাছের লোকজন সালমান এফ রহমানের কাছ থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন এবং বিনিময়ে তাকে সুকুক ইস্যুতে ছাড় ও নিজস্ব পোর্টফলিওয়ের শেয়ার বেচা-কেনায় সুবিধা দেওয়া হয়েছে।দেশের আর্থিক খাতের আরেক বিতর্কিত ব্যক্তি নাফিজ সরাফতের সরাসরি হস্তক্ষেপে আইসিবির সাবসিডিয়ারি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের বেস্ট হোল্ডিং কোম্পানির আইপিওয়ের কাজ করেছে। বিতর্কিত কোম্পানিটির শেয়ার দর ও আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে বাজার অংশীজনের আপত্তি থাকলেও আইসিবির সহায়তায় কারসাজি চক্র বিগত কমিশনের যোগসাজশে আইপিও অনুমোদন করিয়ে নেয়। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বেক্সিমকো সুকুক ইস্যু, বেস্ট হোল্ডিং আইপিও, ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে কারসাজিসহ আরও অনেক বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, বেক্সিমকো সুকুক ইস্যু, বেস্ট হোল্ডিং আইপিও, ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে কারসাজি অনুসন্ধানের বিষয়ে বিএসইসি যেসব তথ্য চেয়েছে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে সকুক সংশ্লিষ্ট তথ্য কমিশনে দেওয়া হয়েছে।