তালিকাভুক্তির পর থেকে মুনাফা কমছে ইনডেক্স এগ্রোর

বিবিধ খাতের কোম্পানি ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর প্রতি বছরই কোম্পানিটির মুনাফা কমতে দেখা গেছে। মূলত কোম্পানিটির মুনাফা তালিকাভুক্তির আগের হিসাব বছর থেকেই টানা কমছে। এমনকি সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকেও (জুলাই-মার্চ) আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির মুনাফা কমতে দেখা গেছে। কোম্পানির নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯-২০ হিসাব বছর থেকে টানা মুনাফা কমছে ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬ টাকা ৭৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৭ টাকা ৭ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরের ধারাবাহিকতায় পরের বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ হিসাব বছরেও কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা আগের হিসাব বছরের তুলনায় ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা কম। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে শতকরা বিবেচনায় কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ১২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ৬৩ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। সর্বশেষ ২০২১-২২ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে আগের হিসাব বছরের তুলনায় কোম্পাটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা কমেছে ৮০ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে নিট মুনাফা হয়েছে ২৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ৯ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ৫ টাকা ৬৩ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। এদিকে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৬৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ টাকা ৮৫ পয়সা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে ৩৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। ইপিএস কমার কারণ হিসেবে কোম্পানিটি জানিয়েছে, আলোচ্য সময়ে তাদের পণ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসংক্রান্ত লোকসানের কারণে কোম্পানির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এসব কারণে আলোচ্য তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে। সম্প্রতি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা টাকা ব্যবহারে এক বছর সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। গত ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত কোম্পানির বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনও নেয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ছিল গত ১৫ জুন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে কোম্পানিটি। তথ্য অনুসারে, পোলট্রি খাতের বর্তমান অবস্থা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈদেশিক মুদ্রা সংকট ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যাংকগুলোর এলসি (ঋণপত্র) খোলার অনাগ্রহের কারণে কোম্পানিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। এজন্য আইপিও তহবিলে থাকা কোম্পানিটির বাকি অর্থ ব্যবহারে আরো এক বছর সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা নতুন একটি প্রকল্প নিয়ে সে প্রকল্পের জন্য ভবন ও নির্মাণকাজ করবে। পাশাপাশি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সরঞ্জাম স্থাপনে আইপিও ব্যয় তহবিলের অবশিষ্ট অর্থ ব্যবহার করা হবে। কোম্পানিটির আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত ৫০ কোটি টাকার মধ্যে তহবিলে এখনো ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ৯৫ হাজার ২৪৪ টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি তাদের আইপিও ব্যয় তহবিলের অর্থ দিয়ে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা স্বল্পমেয়াদি ব্যাংক ঋণ পরিশোধের অুমোদন পায় কোম্পানিটি। অবশ্য তহবিলে থাকা অর্থের মধ্যে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩২ হাজার ১০০ টাকা দিয়েই স্বল্পমেয়াদি ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করতে চেয়েছিল তারা। এ বিষেয় ইজিএম করে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এক্ষেত্রে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে। আইপিওর টাকা থেকে ঋণ পরিশোধের কারণ ব্যাখ্যা করে ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছিল, তারা ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর আইপিওর জন্য আবেদন করে। বিএসইসি থেকে অনুমোদন পায় ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর। পুরো প্রক্রিয়ায় তাদের চার বছরের মতো সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থে কোম্পানিটি আইপিও প্রক্রিয়াকরণের এ সময়ের মধ্যে নিজস্ব অর্থ ও ব্যাংকঋণের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম স্থাপন সম্পন্ন করেছে। আর ভবন ও অন্যান্য নির্মাণের কাজ আংশিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এজন্য তখন ওই খাতের অর্থ তারা ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তবে তাদের প্রস্তাবিত সমুদয় অর্থ এ খাতে ব্যয় করার সম্মতি না পাওয়ায় এখন তারা এ অর্থ ব্যয়ে বাড়তি সময়ের আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।