তালিকাভুক্ত কোম্পানির শুনানিহীন পর্ষদ পুনর্গঠন চায় না বিএপিএলসি
![তালিকাভুক্ত কোম্পানির শুনানিহীন পর্ষদ পুনর্গঠন চায় না বিএপিএলসি](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/6252/BPALC.jpg)
সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন ২০২২-এর খসড়া প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে শুনানি ছাড়াই তালিকাভুক্ত কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) পক্ষ থেকে এই বিধান বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আইনের খসড়ার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো মতামতে এই সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। পাশাপাশি এর একটি অনুলিপি বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে বিএপিএলসির সেক্রেটারি জেনারেল মো. আমজাদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন।বিএসইসি আইনের খসড়ায় পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি নির্ধারিত পদ্ধতিতে এক্সচেঞ্জ, শেয়ারধারক ও কমিশনের কাছে বার্ষিক ও অন্যান্য প্রতিবেদন, কমিশনের পক্ষ থেকে তলব করা কোম্পানি বা এর অধীন কোম্পানির তথ্য, দলিল কিংবা ব্যাখ্যা দাখিল করতে বাধ্য থাকবে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনসংক্রান্ত শর্ত ও নিয়মাচার বিষয়ে কমিশনের জারি করা আদেশ তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের জন্য পরিপালন বাধ্যতামূলক।আলোচ্য ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য কমিশন চাইলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে কমিশন প্রয়োজন মনে করলে পর্ষদ পুনর্গঠনের আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবে। বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদকে শুনানির সুযোগ না দিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করা যাবে না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ মার্কেট ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থে উপযুক্ত বিবেচনা করলে শুনানি ছাড়াই পর্ষদ পুনর্গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে খসড়ায়।এই বিষয়ে বিএপিএলসি বলছে, কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের এখতিয়ার একমাত্র আদালতের। পর্ষদ পুনর্গঠনের এখতিয়ার কমিশনের থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আইনের খসড়া থেকে শুনানি ছাড়াই পর্ষদ পুনর্গঠনসংক্রান্ত বিধান বাদ দেয়ার সুপারিশ করে বিএপিএলসি বলছে, যেকোনো ব্যর্থতা বা অপারগতার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থন বা শুনানির সুযোগ দেয়া উচিত।বিএপিএলসির মতে, শুনানি ছাড়াই কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার মতো সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে পরিণত হবে এবং ভবিষ্যতে এর অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যাবে। এতে ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসার আগ্রহ হারাবে।প্রস্তাবিত আইনের ২(৩) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অভিযোগ’ অর্থ এই আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক মৌখিক, লিখিত বা অন্য কোনোভাবে দাখিল করা অভিযোগ। এই বিষয়ে বিএপিএলসির প্রস্তাব হচ্ছে অভিযোগ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক হতে পারে। তবে মৌখিক কোনো অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়। তাই সংগঠনটি এই ধারায় প্রতিষ্ঠান শব্দটি যোগ করার পাশাপাশি মৌখিক শব্দটি বাদ দেয়ার প্রস্তাব করেছে।এই বিষয়ে বিএপিএলসি বলছে, ১৯৯৩ সালের আইনে বেসরকারি খাত থেকে একজন কমিশনার নিয়োগের সুযোগ নতুন আইনের খসড়ায় বাদ পড়েছে। এই বিধান বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের যোগ্যতার বিষয়ে সিকিউরিটিজ-সংক্রান্ত আইন-কানুন, বিধিমালা, ও শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট বিধিবিধান সম্পর্কে সম্যক ধারণাসহ কমপক্ষে ১০ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকার বিষয়টি প্রস্তাব করেছে বিএপিএলসি। প্রস্তাবিত আইনে এক্ষেত্রে ২০ বছরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার ২৭(৪) ধারার বিষয়ে বিএপিএলসি বলছে, কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঘাটতি বা শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হবে তার একটি নির্দিষ্ট তালিকা এই ধারায় কিংবা তফসিল আকারে প্রকাশ করতে হবে। এই বিষয়ে সংগঠনটির যুক্তি হচ্ছে ঠিক কী কী কারণে কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হবে তার একটি নির্দিষ্ট তালিকা থাকা উচিত।আইনের ২৭(৬) ধারায় উল্লেখ করা তালিকাচ্যুতির বিষয়ে বিএপিএলসি বলছে, এক্ষেত্রে ‘তালিকাচ্যুত করার যুক্তিসংগত কারণ উল্লেখ করে’ অংশটি যুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে সংগঠনটির মত হচ্ছে কোনো সিকিউরিটিকে তালিকাচ্যুত করার অবশ্যই কোনো যুক্তিসংগত কারণ থাকা উচিত। ২৭(৯) ধারায় ‘এবং উপধারা(৭)-এর অধীনে ক্রয়-বিক্রয় স্থগিত করা যাবে না’ অংশটি যোগ করার কথা বলছে সংগঠনটি। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হচ্ছে কোনো তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিকে যথাযথ শুনানির সুযোগ না দিয়ে সিকিউরিটিজের ক্রয়-বিক্রয় স্থগিত করা যুক্তিসংগত নয়। এতে শেয়ারবাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।প্রস্তাবিত আইনের ৩১ ধারায় উল্লেখ করা তালিকাভুক্ত ইকুইটি সিকিউরিটির সুবিধাভোগী মালিকের বিবরণী জমাদানের বিষয়ে বিএপিএলসির মত হচ্ছে এ-সম্পর্কিত তথ্য বা বিবরণী কোনো ব্যক্তি কর্তৃক নয়, বরং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে এবং সময়ে বা বিরতিতে রিটার্ন দাখিল করবে। এজন্য খসড়ায় উল্লেখ করা তিনি শব্দটি বা দিয়ে ‘সংশ্লিষ্ট ইস্যুয়ার কোম্পানি’ অংশটি যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ধরনের বিবরণী ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য হলে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে বলে মনে করছে সংগঠনটি।আইনের ৩৩ ধারায় উল্লেখ করা পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী এবং সুবিধাভোগী মালিক কর্তৃক ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ছয় মাসের বিষয়টি পরিষ্কার করা, প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইস্যুয়ারের করণীয় কী সেটি পরিষ্কার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি এক্ষেত্রে লাভের অর্থ ইস্যুয়ারকে দেয়ার বিষয়টি বাদ দেয়ার কথাও বলছে সংগঠনটি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসির সুবিধাভোগীর তালিকা সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের কাছে জমা বা প্রকাশ করার প্রস্তাব করেছে বিএপিএলসি। এক্ষেত্রে সংগঠনটির যুক্তি হচ্ছে সুবিধাভোগী ব্যবসা শুধু কোম্পানিগুলোর সুবিধাভোগীদের মাধ্যমেই হয় না, বরং স্টক এক্সচেঞ্জ বা বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃকও হতে পারে। আগে এই ধরনের নজির লক্ষ করা গেছে। তাই সুবিধাভোগী ব্যবসা রোধ করতে উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধাভোগীর তালিকা প্রকাশ করা উচিত।প্রস্তাবিত আইনের ৪৪(৬) ধারায় উল্লেখিত আচিলে সময় আরোপিত দণ্ডের ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেয়ার বিষয়ে বিএপিএলসি এক্ষেত্রে আরোপিত দণ্ডের ১০ শতাংশ অর্থ জমা দেয়ার প্রস্তাব করেছে। ৪৮ ধারায় উল্লেখ করা ‘ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’-এর পরিবর্তে ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা’ যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।এছাড়া এই আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের বিষয়ে ৫৯(১) ধারায় প্রস্তাবিত বিধি কমিশনের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এবং এই বিষয়ে মতামত, পরামর্শ বা আপত্তি দাখিল করার জন্য অন্যূন দুই সপ্তাহের পরিবর্তে তিন সপ্তাহ সময় প্রদানের দাবি জানিয়েছে বিএপিএলসি।