তালিকাভুক্ত এক কোম্পানির দুই ধরনের আর্থিক প্রতিবেদন!

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও স্টক এক্সচেঞ্জে দুই ধরনের আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।আলোচ্য দুই অর্থবছরে কোম্পানিটির দুই ধরনের আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে মোট বিক্রয়, কস্ট অব গুড সোল্ড, নিট আয়সহ অনান্য উপাদান গড়মিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর বছরে আয়কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে এবং প্রকৃত তথ্য গোপন করা হয়েছে।আর্থিক প্রতিবেদনে গরমিল পাওয়ায় কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর।সম্প্রতি এই বিষয়ে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।চিঠিতে এনবিআর বলেছে, উল্লিখিত করদাতা কোম্পানি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই-সিএসই) নিবন্ধিত। কোম্পানিটির বিষয়ে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য এবং করদাতা কোম্পানির আয়কর নথির প্রাথমিক পর্যালোচনা করেছে।পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, আয়কর বিভাগ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২০১৪-২০১৫ ও ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের জন্য দাখিল করা একই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে হিসাবের বিভিন্ন তথ্যে ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। এতে একই সময়ের জন্য দাখিলকৃত প্রতিবেদনে দুই কর্তৃপক্ষের জন্য দুই ধরনের আয় প্রদর্শন করেছে।এছাড়া, মোট বিক্রয়, কস্ট অব গুড সোল্ড, নিট আয়সহ অনান্য উপাদানে গড়মিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই অবস্থায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত কোম্পানি জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (টিআইএন নম্বর- ৪৯৭০৭১১৯৩৫৪৯) ২০১৪-২০১৫ এবং ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের দাখিলকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আয়ের প্রকৃত তথ্য গোপনের বিষয়টি অবগতি ও যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।এই বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, প্রথমে নিরীক্ষকের কাছ থেকে নিশ্চিত করতে হবে, কোন প্রতিবেদনটি সঠিক। সেক্ষেত্রে যদি দুটো প্রতিবেদনই তৈরি করে থাকে, সেক্ষেত্রে নিরীক্ষকও শস্তির আওতায় আসবে।তিনি বলেন, যদি একটি নিরীক্ষক তৈরি করে আর অপরটি কোম্পানি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে, তাহলে শুধু কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকবে। এজন্য প্রথমে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন নিশ্চিত করে পরবর্তীতে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ‘বি’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৮১ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮ কোটি ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৯টি।ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে মোট শেয়ারের ৩৬.৯৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২১.৭৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪১.২৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।২০১৯ থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত টানা তিন অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড দেয়নি জাহিনটেক্স।