সূচক বাড়লেও অধিকাংশ খাতে নেতিবাচক রিটার্ন

দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সূচক বাড়লেও লেনদেন কমতে দেখা গিয়েছে। এ সময়ে প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে লেনদেন কমার পাশাপাশি অধিকাংশ শেয়ারের দরপতনও হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির বেশির ভাগ খাত থেকেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার সিএসইতেও গত সপ্তাহে সূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেন হ্রাস পেয়েছে।বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জুন ক্লোজিং আর্নিং ডিসক্লোজারের কথা বিবেচনায় নিয়ে বাছাইকৃত শেয়ারে বিনিয়োগ করতে দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি কিছুসংখ্যক বিনিয়োগকারীর মধ্যে মুনাফা তুলে নেয়া প্রবণতাও পরিলক্ষিত হয়েছে। সার্বিকভাবে গত সপ্তাহে অনেক শেয়ারের দর সংশোধন হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। সূচকটির বর্তমান অবস্থান ৬ হাজার ৫৬০ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ হাজার ৫০৯ পয়েন্টে। সূচকের উত্থানে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, কোহিনূর কেমিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ ও ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ারের।ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৭০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ৩০৬ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৩২ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৪০৯ পয়েন্টে। ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৯৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৮টির, কমেছে ২৬৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৪টির। এছাড়া লেনদেন হয়নি ৮টির।ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৯ হাজার ৯১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৯ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে ৪২৩ কোটি টাকার বেশি বা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের সাড়ে ১৮ শতাংশই ছিল খাতটির দখলে। ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। এ খাতের দখলে রয়েছে মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ লেনদেন নিয়ে তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। পরের অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দখলে রয়েছে মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।ডিএসইতে গত সপ্তাহে অধিকাংশ খাত থেকে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। তবে যে কয়টি খাত থেকে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে তার শীর্ষে রয়েছে পাট খাত। গত সপ্তাহে খাতটি থেকে ১১ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। পরের অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে এসেছে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন। এছাড়া সিমেন্ট, বিবিধ, ভ্রমণ ও অবকাশ এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাত থেকে গত সপ্তাহে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। বাকি সব খাত থেকেই গত সপ্তাহে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সেবা ও আবাসন খাত থেকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে, ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে কাগজ ও মুদ্রণ খাত থেকে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত থেকেও এসেছে ৩ দশমিক ২০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন। এছাড়া সাধারণ বীমা খাত থেকে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ এবং বস্ত্র খাত থেকে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে গত সপ্তাহে। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকায়। যেখানে সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকায়। সে হিসাবে আলোচ্য সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৭৭৯ কোটি টাকা বা দশমিক ১৫ শতাংশ।অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে ১৯ হাজার ২৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৯ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৫৫৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৪৮১ পয়েন্টে। সিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ১৬০ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ২৭৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৮টির, কমেছে ২৩৬টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির।