শ্রম আইন লঙ্ঘনসহ নানা অনিয়মে জর্জরিত এডভেন্ট ফার্মা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানি এডভেন্ট ফার্মা লিমিটেড দেশে বিদ্যমান শ্রম আইন সঠিকভাবে পালন করছে না। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এভাবে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে কোম্পানিটি।কোম্পানির ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিরীক্ষক মতামত দিয়েছে।প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এডভেন্ট ফার্মা এখনো কর্মচারীদের জন্য প্রভিডেন্ড ফান্ড গঠন করেনি। পাশাপাশি কর্মচারীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোন গ্রাচুইটি বা ক্ষতিপূরণ সুবিধা। এমনকি এ উদ্যেশে কোন বিধানও করা হয়নি। যা আর্থিক প্রতিবেদনে একটি অ-সম্মতি ও ভুল বিবৃতি।আরও জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু কেনাকাটা ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক লেনদেন করেনি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ব্যাংক লেনদেনের পরিবর্তে নগদ টাকায় লেনদেন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এডভেন্ট ফার্মা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, গত বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৯১২ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার কথা ছিলো। যার মধ্যে ৭ লাখ ৫১ হাজার ৫১৩ টাকা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) হস্তান্তরযোগ্য।তবে অডিটরস রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে, প্রদেয় বকেয়া ব্যালেন্স লভ্যাংশের সাথে কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবের ব্যালেন্সে ঘাটতি পাওয়া গেছে। কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাবে ব্যালেন্স ছিলো ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭২৮ টাকা। যা দিয়ে লভ্যাংশের অর্থ পরিশোধ সম্ভব ছিলো না।পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা সত্যিকার অর্থে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে তারা অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা করে। ভালো বিনিয়োগকারীরা জেনেশুনে বিনিয়োগ করে। লোভে পড়ে কারো কথায় হুট করে বিনিয়োগ করা ঠিক না। যেসব কোম্পানিতে নানা অনিয়ম রয়েছে, সেখানে ভালো বিনিয়োগকারীরা কখনোই বিনিয়োগ করে না।এসব বিষয়ে জানতে এডভেন্ট ফার্মার কোম্পানি সেক্রেটারির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেওয়া কোম্পানি সচিব দেলোয়ার হোসেনের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে, ‘এক ব্যক্তি বলে এটি কোনো কোম্পানির নাম্বার না। যদি কোনো ওয়েবসাইটে এ নাম্বার দেয়া হয় তাহলে ভুলে দেওয়া হয়েছে।’এদিকে বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক মাসে এডভেন্ট ফার্মার শেয়ার দর কমেছে ৫ টাকা ৪০ পয়সা। এক মাস আগে ওষুধ খাতের এ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিলো ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। গতকাল বুধবার (৯ অক্টোবর) লেনদেন শেষে শেয়ার দার দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ১০ পয়সা।২০১৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানিটি এখন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। তালিকাভুক্তির পর থেকেই কোম্পানিটি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে বেশ কৃপণতা দেখিয়েছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালে ২ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে এডভেন্ট ফার্মা। এরপর এক বছর বিরতি দিয়ে ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিবছর ২ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। অর্থাৎ ২ শতাংশের উপরে কখনোই বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। তবে এসব বছরগুলোতে বোনাস লভ্যাংশও দিয়েছে কোম্পানিটি।