সংকটেও বিক্রি ও মুনাফা বেড়েছে লাফার্জহোলসিমের
![সংকটেও বিক্রি ও মুনাফা বেড়েছে লাফার্জহোলসিমের](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/5717/news_332819_1.png)
ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ও জাহাজীকরণের ব্যয়বৃদ্ধির কারণে সার্বিকভাবে ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপের সংকুচিত হয়েছে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা। এ অবস্থায় প্রায় সব খাতের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে এ সংকটের মধ্যেও সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরে বিক্রি ও মুনাফা বেড়েছে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক সিমেন্ট কোম্পানি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের। পাশাপাশ অন্তর্বর্তীকালীন ও চূড়ান্ত মিলিয়ে আলোচ্য হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে, যা কোম্পানিটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।গতকাল অনুষ্ঠিত সভায় সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের পর্ষদ। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। আগের হিসাব বছরে নিট বিক্রি ছিল ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট বিক্রি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয়কর-পূর্ববর্তী পরিচালন মুনাফা ২৩ শতাংশ বেড়ে ৫৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২২ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে নিট মুনাফা ছিল ৩৮৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৮৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরে ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৩৪ পয়সায়। লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরের জন্য প্রতিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে ১ টাকা ৫০ পয়সা চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ১৭৪ কোটি ২১ লাখ টাকা বিতরণ করবে। ২০২২ হিসাব বছরে কোম্পানিটি দুই দফায় ১৫ ও ১৮ শতাংশ হারে অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। সব মিলিয়ে আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য মোট ৪৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা কোম্পনিটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।কোম্পানিটির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন পণ্য, উদ্ভাবনী সমাধান, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেবা এবং ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট এ আর্থিক ফলাফল অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। পাশাপাশি অব্যাহত ব্যয় সংকোচন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগগুলো এ ফলাফল অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। অনিশ্চিত ভূ-রাজনীতির কারণে ২০২৩ সাল আরেকটি চ্যালেঞ্জিং বছর হতে যাচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ এ বছরও অব্যাহত থাকবে। তা সত্ত্বেও আরো একটি দারুণ বছর অর্জনের ব্যাপারে তারা আশাবাদী।লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘২০২২ সাল লাফার্জহোলসিমের জন্য একটি দারুণ বছর ছিল এবং আমরা মুনাফা ও তারল্য সংগ্রহ উভয় ক্ষেত্রেই রেকর্ড ফলাফল অর্জনে সক্ষম হয়েছি। আমি সব কর্মীকে ধন্যবাদ জানাই, যারা এটাকে সম্ভব করেছেন। আমরা সুপারক্রিট প্লাস নামে নতুন টেকসই সিমেন্ট ব্র্যান্ড বাজারে এনেছি, অ্যাগ্রিগেটস ব্যবসার প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করেছি, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ও নতুন চ্যানেলগুলো সম্প্রসারণ করেছি। ২০৫০ সালের মধ্যে একটি কার্বন নিউট্রাল কোম্পানি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে আমাদের টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি জিওসাইকেল অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। আমরা ২০২৩ সাল নিয়ে অশাবাদী এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনী ও টেকসই পণ্য বাংলাদেশের বাজারে আনা অব্যাহত থাকবে, যা বাজারে অন্যদের চেয়ে আমাদের আলাদা করবে।’প্রায় দুই দশক ধরেকার্যক্রম পরিচালনাকারী লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিমেন্ট কারখানা এবং তিনটি গ্রাইন্ডিং স্টেশন স্থাপনে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা সিমেন্ট খাতে দেশে সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগ। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক হোলসিম গ্রুপ ও স্পেনভিত্তিক সিমেন্টোস মলিন্স গ্রুপের যৌথ উদ্যোগ লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৩ সালে।ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ার সর্বশেষ ৬৪ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ৫৯ টাকা ৭০ থেকে ৮৪ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।