শক্তিশালী শেয়ারবাজারের প্রধান চার পিলার
![শক্তিশালী শেয়ারবাজারের প্রধান চার পিলার](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/3901/sharemarr.png)
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে গড়তে হলে চারটি পিলার বা স্তম্ভের কোন বিকল্প নেই। যেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:১. ভালো মানের ব্র্যান্ড কোম্পানি বা সিকিউরিটিস বা প্রোডাক্ট: শেয়ারবাজারে যে কোম্পানি প্রবেশ করবে সেটা মূল মার্কেটে হোক অথবা এসএমই মার্কেটে হোক, সেটা অবশ্যই হতে হবে দৃশ্যমান ভালো মানের ব্র্যান্ড কোম্পানি এবং যার অবশ্যই একটি বড় এবং যোগ্য পরিচালনা পর্ষদ থাকতে হবে। কারণ যে কোম্পানির একটি ভালো ও বড় মাপের যোগ্য পরিচালনা পর্ষদ থাকে না, অদূর ভবিষ্যতে ওই কোম্পানিটি নেতৃত্বহীন বা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। একটি বিষয় মনে রাখা জরুরী যে, একটি শেয়ারবাজারে যত ভালো ও শক্তিশালী মানের ব্র্যান্ড কোম্পানি / সিকিউরিটিজ অথবা প্রোডাক্ট প্রবেশ করবে ওই শেয়ারবাজারকে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিকমানের শেয়ারবাজার হিসাবে দাঁড় করানো ততোই সহজ হবে। উন্নত বিশ্বের শেয়ারবাজারের দিকে তাকালে আমরা সেটাই দেখতে পাই। অপরদিকে একটি শেয়ারবাজারে যত বেশি দুর্বল কোম্পানি বা সিকিউরিটিজ অথবা প্রোডাক্ট প্রবেশ করবে, সেই বাজারের ভবিষ্যৎ এবং স্থিতিশীলতা ততটাই ঝুঁকিপূর্ন হবে।২। বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং সচেতন বিনিয়োগকারী: একটি সুস্থ এবং উন্নত শেয়ারবাজার গড়ার লক্ষ্যে এই বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন বিনিয়োগকারী ক্ষুদ্র হোক বা প্রাতিষ্ঠানিক হোক, তাদের আচরণ পেশাদারদের মত হওয়া জরুরী। আনন্দের বিষয় হলো বর্তমান সরকার এবং কমিশন এ বিষয়ে অত্যধিক জোর দিয়েছে এবং বিভিন্ন কর্মকান্ড চলমান রেখেছে যা অত্যন্ত ইতিবাচক। একজন বিনিয়োগকারী যখন বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, সচেতন হয় এবং পেশাদারদের মতো আচরণ করার চেষ্টা করে, তখন ভুল করা বা ভুল পথে পা দেওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে কমে আসে। এমনকি অন্যের দ্বারা প্রতারিত বা প্ররোচিত হবার সম্ভাবনাও কমে আসে। শিক্ষিত এবং সচেতন বিনিয়োগকারী একটি বাজারের বড় সম্পদ ঠিক যেমন একটি ভালো মানের ব্র্যান্ড কোম্পানি। অতএব এই বিষয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।৩। পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী: প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে আমরা বড় মাপের পেশাদার বিনিয়োগকারী বলতে পারি। এটা আমাদের কাছে বুঝতে সহজ হবে, আমাদের দেশে পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাদার বিনিয়োগকারীর খুবই অভাব। একটি উন্নত এবং স্থিতিশীল শেয়ারবাজারের জন্য পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কোন বিকল্প নেই। বিশ্বের যতগুলো উন্নত শেয়ারবাজার আছে সেখানে আমরা পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর উপস্থিতি দেখতে পাই। এখানে মনে রাখা দরকার ভালো মানের পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একটি স্থিতিশীল এবং উন্নত শেয়ারবাজারের খুঁটি হিসেবে এবং নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তাদের প্রত্যেক চিন্তাভাবনা এবং কর্মকাণ্ডগুলো যথেষ্ট প্রফেশনাল বা পেশাদার। শেয়ারবাজারের যখন সাপোর্টের প্রয়োজন হয় তখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই মূলত বাজারকে সাপোর্ট দিতে এগিয়ে আসে। এছাড়া তারা বিভিন্ন আঙ্গিকে শেয়ারবাজারে পেশাদার কর্মকান্ড পরিচালনা করে যার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু আমাদের দেশে দুঃখজনকভাবে পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অভাব এখানে ক্ষুদ্র বা রিটেইল বিনিয়োগকারীই অধিক। তবে একটি কথা এখানে বলা জরুরি যে, পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী না থাকার অন্যতম এবং প্রধান কারণ হলো এখানে পর্যাপ্ত ভালো মানের বা ব্র্যান্ড মৌলভিত্তিক শেয়ার বা সিকিউরিটিজ বা প্রোডাক্টের অভাব। অর্থাৎ তাদের বিনিয়োগ করার সুযোগ অনেক কম বা সংকুচিত। অতএব এ বিষয়টিও আমাদের গুরুত্বের সাথে মাথায় রাখতে হবে।৪। শক্তিশালী সরকারি মন্ত্রণালয় এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা: একটি দেশের শেয়ারবাজার পরিচালিত হয় সরকারী মন্ত্রণালয় এবং কিছু নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে। যেমন আমাদের দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই অন্যতম। প্রত্যেকটি দেশের শেয়ারবাজার ওই দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করে। এক রকম বলা যায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাই যেন সবকিছু। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযুগী কর্মকান্ড এবং সিদ্ধান্ত একটি শক্তিশালী শেয়ারবাজার গড়ার লক্ষ্যে পিলার বা স্তম্ভ হিসাবে কাজ করে। যা সংক্ষেপে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এক কথায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তদারকি এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত একটি শেয়ারবাজারকে উন্নত বিশ্বের ন্যায় আন্তর্জাতিক মানের শেয়ারবাজারে দাঁড় করার জন্য মূল ভিত্তী হিসেবে কাজ করে।