শক্তিশালী পুঁজিবাজার বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের জন্য অপরিহার্য – ডিএসই চেয়ারম্যান

Date: 2023-08-22 09:00:07
শক্তিশালী পুঁজিবাজার বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের জন্য অপরিহার্য – ডিএসই চেয়ারম্যান
ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেছেন, শক্তিশালী পুঁজিবাজার বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের জন্য অপরিহার্য৷ আর উন্নয়ন ও উত্পাদন কর্মকান্ডে গতিশীলতা এলে বিদেশী বিনিয়োগ পুঁজিবাজারমূখী হতে উত্সাহিত হয়৷ দেশের শেয়ারবাজার এখন অনেক পরিণত, তাই উদীয়মান পুঁজিবাজারকে উন্নয়নের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নিয়ে শেয়ারবাজারে জমে ওঠা বিপুল পরিমাণ মূলধনের একাংশ উত্পাদনশীল খাতে স্থানান্তর করে অর্থনীতির মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন৷আজ (২১ আগষ্ট) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি ত্বরান্বিত করা এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নে মানসম্পন্ন আইপিও আনতে “মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সাথে তালিকাভুক্তি সংক্রান্ত সমন্বয় সভায়” প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু এসব কথা বলেন।ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ-এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট মোঃ ছায়েদুর রহমান৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ এবং মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ছামিউল ইসলাম।cwtশোকাবহ আগস্ট মাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং একই সাথে রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সকল সূচক ইতিবাচক থাকার কারণে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে৷ আর এজন্য পলিসি সাপোর্টের দিকে না তাকিয়ে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে৷ এ বিষয়ে পূর্বে আপনারা যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন ভবিষ্যতেও আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ পুঁজিবাজারকে একটি শক্ত অবস্থানে নিবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস৷তিনি কোম্পানি তালিকাভুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, এশিয়ার অন্যান্য স্টক এক্সচেঞ্জের তুলনায় বাংলাদেশে মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকা সত্বেও গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে ভালো মানের আইপিও তালিকাভুক্তি হয় নাই৷ বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৮টি মার্চেন্ট ব্যাংক কাজ করছে৷ কিন্তু নতুন আইপিও আনার অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম৷ ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে ২১৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক আছে এবং সেখানে ২২১৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে ১৩টি মার্চেন্ট ব্যাংক ৫২৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করেছে৷ বোরসা মালয়েশিয়ার ও কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অনুযায়ী গড় তালিকাভুক্ত কোম্পানি যথাক্রমে ২৪ এবং ১২টি৷ ডিএসই গড় মাত্র ৫টি। আরও অধিক আইপিও আনতে আমাদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে এবং ইস্যু ম্যানেজারদের সক্রিয় হতে হবে। এ বিষয়ে যেকোন ধরণের সহযোগিতা ডিএসই করবে এবং সুন্দর আগামীর পুঁজিবাজার গঠনে আমরা একসাথে কাজ করবো।প্রাইভেট বন্ড সম্পর্কে ড. হাসান বাবু বলেন, ১৬,৮৬০ কোটি টাকা মূল্যের ৪২টি প্রাইভেট বন্ড এটিবি প্লাটফর্মে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ছোট পুঁজির প্রয়োজনে এসএমই প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদেরকে কিভাবে পুঁজিবাজার মুখী করা যায় এবং কিভাবে পরামর্শ সেবা দেয়া যায় সেটা নিয়ে আমরা যৌথভাবে কাজ করতে চাই৷কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অনেক বাধা রয়েছে যেমন-উদ্যোক্তাদের মানসিকতা, আমলাতন্ত্র, সঠিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, আইপিওর দীর্ঘসুত্রতা, বহুজাতিক কোম্পানির ক্ষেত্রে মূল দেশ থেকে তহবিল প্রাপ্তি, রাজস্ব গোপন করার প্রবণতা, নীতির অসামঞ্জস্যতা, কর বৈষম্য, ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে ঋণ ইত্যাদি৷ আজকের বৈঠকের মাধ্যমে আমাদের মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ উঠে আসবে এবং সে অনুযায়ী আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করব। এছাড়াও অঞ্চলভিত্তিক রোড শো আয়োজনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাগণকে তাদের ভাল কোম্পানির তালিকাভুক্ত করতে উত্সাহিত করব৷ এক্ষেত্রে একটি নতুন কর্ম কৌশল নিয়ে কাজ করতে FID, BB, BSEC, Stock Exchange, BMBA, ICAB এবং FRC-এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে৷চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারের সমস্যা একদিন আলোচনা বা সেমিনার করে সমাধান করা সম্ভব নয়। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর অনেকগুলো বিষয়কে দেখতে হয়। এ অবস্থায় আমাদের একটি মাল্টিডাইমেনশন বডি তৈরি করা উচিত, যারা বাজারের সঠিক পর্যালোচনার মাধ্যমে কিভাবে মার্কেটকে উঠানো যায় সেই দিক নির্দেশনা তৈরি করবে, যেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দিতে পারবো।আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, যদি আমরা শুধু নিজেদের সমস্যা সমাধান করি তাহলে মার্কেটকে ভালো করা যাবে না। পুরো মার্কেটকে সামনে রেখে আমরা যদি একটি গাইডলাইন তৈরি করি, বিভিন্ন আইনের দুর্বলতাগুলোকে যদি এক জায়গায় এনে সমাধান করি তাহলেই কেবল পুরো পুজিবাজারে উন্নয়ন হবে।জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদানের কথা প্রসঙ্গে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বাজারের গভীরতা অর্জনে ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি দ্রুত তালিকাভুক্ত করণের কোন বিকল্প নেই। আর এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে অবদান রাখতে হবে৷ এ কাজগুলো করতে পারলে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে৷ পুঁজিবাজারের সেতুবন্ধক হিসেবে আপনারা বাজারে বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলোকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রত্যাশিত পুঁজিবাজার গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন৷পরে কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কার্যক্রমের বর্তমান পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বাজারের প্রত্যাশা, ভালো মানের আইপিও আনার সুযোগ এবং বাধা, মূল মার্কেট, SME মার্কেট এবং ATB মার্কেটের সম্ভাবনা, নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং পারস্পারিক সহযোগিতা, সচেতনতা প্রোগ্রাম ও পুজিবাজারের বিস্তৃতি পেতে উদ্যোক্তাসহ কোম্পানির CFO এবং COO দের আকৃষ্ট করা, যৌথ প্রচারণা বা মেলা, পুঁজিবাজারকে উত্সাহিত করতে সরকারকে অবহিত করা এবং চাহিদা ও যোগান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দ্বারা সেক্টর ভিওিক কাজসহ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর আলোচনা করা হয়৷

Share this news