শিল্পায়নে শেয়ারবাজারের গুরুত্বারোপ করা বিএসইসির আইপিওতে ব্যাংক-বীমার অগ্রাধিকার

Date: 2022-09-24 23:32:03
শিল্পায়নে শেয়ারবাজারের গুরুত্বারোপ করা বিএসইসির আইপিওতে ব্যাংক-বীমার অগ্রাধিকার
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই শিল্পায়নে অর্থায়নে ঋণের পরিবর্তে ইক্যুইটি হিসেবে শেয়ারবাজারের গুরুত্বারোপ করে আসছে। যা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু সেই কমিশনই শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে ব্যাংক-বীমাকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের অনুমোদন অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। যেসব অর্থ ঘুরেফিরে ঋণ হিসেবেই শিল্পায়নে যাচ্ছে।বর্তমান কমিশনের দাবি, ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তার ফেরত দিতে হয়। তবে অনেক সময় ঋণ নিয়ে অনেক কোম্পানি ব্যবসায় ভালো করতে না পারলে, তা খেলাপি হয়ে যায়। এতে ব্যাংকের উপর চাপ পড়ে। যা সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। এছাড়া স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া ব্যাংকের কাজ না। যাতে শিল্পায়নে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের একমাত্র উৎস হওয়া উচিত শেয়ারবাজার।এলক্ষ্যে বর্তমান কমিশন কাজ করছে বলেও দাবি। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের সঙ্গে আলাপ হয়েছে এবং তিনি এতে সম্মত হয়েছেন।কিন্তু যেই বিএসইসি শিল্পায়নে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য শেয়ারবাজারকে গুরুত্বারোপ করে, সেই কমিশনই ব্যাংক-বীমাকে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনে অগ্রাধিকার দেয়। পাবলিক ইস্যু রুলসের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ছাড় বা অব্যাহতি দিয়ে দ্রুত আইপিও দেয়। এর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ সেই ঋণের মাধ্যমে শিল্পায়নে যায়। একটি ব্যাংকের প্রধান কাজ এবং আয়ের মূল উৎসই প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে আয়। আর ব্যাংকগুলো আইপিওতে টাকা নিয়ে মূলত সেই ঋণই দেয়। আর বীমা কোম্পানিগুলো মূলত এফডিআর করে। এরফলে আইপিওর অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে সেই ঋণ হিসেবেই বিতরন হয়।দেখা গেছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে ৩৭টি কোম্পানির অর্থ উত্তোলনে আইপিও/কোয়ালিফাইড অফারের অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে ১২টি ব্যাংক-বীমা কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলোকে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে শিল্পায়নে ২৫টি কোম্পানিকে ১ হাজার ৭২২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা তুলতে দেওয়া হয়েছে।কমিশন ব্যাংক-বীমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংককে। এই ব্যাংকটি শেয়ারবাজার থেকে ৪২৮ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। যার ২৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা এসএমই ও প্রজেক্টে ঋণ হিসেবে, ১০০ কোটি টাকা সরকারি সিকিউরিটিজ ও৭৫ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে। অর্থাৎ ১ টাকাও ঋণের বাহিরে শিল্পায়নে যাচ্ছে না।এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ব্যাংক, বীমা ও লিজিং কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। এছাড়া এ জাতীয় কোম্পানির মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য মূলধনের দরকার। এছাড়া এসব কোম্পানি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও। যেগুলো শেয়ারবাজারের জন্য সহায়ক। তাই কমিশন এই খাতের কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদন দেয়।এ বিষয়ে দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ মোঃ শায়খুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ব্যাংক-বীমাকে আইপিওতে গুরুত্বারোপের মাধ্যমে বিএসইসি শিল্পায়নে অর্থায়ন নিয়ে নিজের দাবির বিপরীতে কাজ করছে। এই খাতের কোম্পানিগুলো আইপিওতে সংগৃহিত অর্থ প্রকৃতপক্ষে ঋণ হিসেবে প্রদান করে। যাতে কমিশন শিল্পায়নে ঋণের পরিবর্তে শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়নের যে গুরুত্বারোপ করছে, তা পূরণ হচ্ছে না।

Share this news