শেয়ারবাজারের জন্য নীতি সহায়তা চায় বিএমবিএ
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ডিভিডেন্ডের উপর থেকে কর প্রত্যাহার, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়ানোসহ বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে। বিএমবিএ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) এই চিঠি পাঠিয়েছে।বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে গতিশীল করে সার্বিক অর্থনীতিতে এর অবদান বাড়ানোর লক্ষ্যে ৯টি বিষয় বিবেচনা করার প্রস্তাব দেয়া হয়।সেগুলো হলো:-১. ডিভিডেন্ডের ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করতে হবে। এর কারণ হিসেবে বিএমবিএর চিঠিতে বলা হয়, একটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি করপোরেট কর পরিশোধের পর ডিভিডেন্ড প্রদান করে। সেই ডিভিডেন্ড থেকে আবার উচ্চহারে কর কর্তন দ্বৈত করের সামিল। তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডিভিডেন্ড গ্রহণের প্রতি অনীহা। দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ডিভিডেন্ডের কর প্রত্যাহার করা জরুরি।২. তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের পার্থক্য বাড়াতে হবে। বিএমবিএর চিঠিতে বলা হয়, কর কমাতে বলছি না, কেবল তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের হারের ব্যবধান বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করছি।তাহলে বৃহৎ বা ভালো প্রতিষ্ঠানসমূহ তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী হবে এবং বাজারের আকৃতি ও গভীরতা বৃদ্ধি পাবে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আরও গতিশীল হবে। বর্তমানে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারের ব্যবধান উদ্যোক্তাদের তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করতে পারছে না।৩. বন্ড বাজারকে গতিশীল করা বা বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য কর কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।চিঠিতে বলা হয়, বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর স্পেশাল রেটে (৫ শতাংশ) কর আরোপ করা যেতে পারে, তাহলে বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন বিনিয়োগকারীরা।৪. লেনদেনের (ট্রেডিং) ওপর করহার কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক শূন্য এক পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। এতে বাজারে লেনদেনের পাশাপাশি সরকারের করের পরিমাণ বাড়বে।৫. তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়কর নিষ্পত্তি সহজীকরণ করতে হবে।৬. মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে পলিসি প্রয়োজন এবং এর ডিভিডেন্ড করমুক্ত হতে হবে।৭. ভালো/বৃহৎ/প্রতিষ্ঠান/এমএনসি/সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য পলিসি করতে হবে।চিঠিতে বলা হয়, ব্যবসার আকার বা ঋণ ও পুঁজির আকারের ভিত্তিতে তালিকাভুক্তির পলিসি করা প্রয়োজন। যত বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানি হবে সরকার তত বেশি কর পাবে।৮. তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার ৫ শতাংশ কমানো যেতে পারে। এতে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত হবে।৯. ট্রেডিং গেইন এবং ক্যাপিটাল গেইন একই সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত না করে আলাদা কর কাঠামোয় আনতে হবে।চিঠিতে বলা হয়েছে, মাঝে মাঝে কিছু খন্ডিত সহায়তা বা সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারকে চলমান করার চেষ্টা করা হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। শেয়ারবাজার যে কোনো দেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অংশ কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তা দৃশ্যমান অবস্থায় আসতে পারেনি।চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আমাদের দেশের অর্থনীতে জিডিপি এর তুলনায় বাজার মূলধন অনুপাত (market capital ratio) অত্যন্ত নগণ্য (১৭% মাত্র) ১৭-১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশ এখানে কর্মসংস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মসংস্থান করার জন্য শিল্পায়ন, ব্যবসা বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী। এলক্ষ্যে অর্থের যোগান বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অব্যবহৃত ছোট ছোট সঞ্চয়সমূহকে উৎপাদনমূখী করার জন্য একমাত্র মাধ্যম হলো গতিশীল শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজার গতিশীল না থাকলে এ ধরনের উদ্যোগ কার্যকর হয় না।