শেয়ারের ‘মূল্যস্তর’ এখনই উঠছে না

Date: 2023-01-04 16:00:11
শেয়ারের ‘মূল্যস্তর’ এখনই উঠছে না
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সাফ জানিয়ে দিয়েছে, শেয়ারবাজারের বর্তমান মন্দাবস্থায় এখনই ‘ফ্লোর প্রাইস’ বা ‘সর্বনিম্ন মূল্যস্তর’ তুলে নেওয়া হবে না। বাজার সুস্থাবস্থায় ফিরলেই কেবল এটি তুলে নেওয়া হবে।গতকাল বুধবার বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিষয়টি জানিয়ে দেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম। শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি, ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আগারগাঁওয়ের নিজস্ব কার্যালয়ে এ বৈঠক করে বিএসইসি।বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে বাজারকে গতিশীল করতে ‘মূল্যস্তর’ তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস কখনো কোনো সুস্থ বাজারের লক্ষণ না। বিষয়টির সঙ্গে আমরাও একমত। কিন্তু বাস্তবতা ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এ কাজটি করতে হয়েছে। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট এক অসুস্থ পরিস্থিতির কারণে ফ্লোর প্রাইস দিতে হয়েছে। এ মুহূর্তে সেটি তুলে নিলে বাজার এক ভয়ানক পরিণতিতে চলে যাবে। মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তখন বাজারের বদনাম হয়ে যাবে। তাই এ মুহূর্তে আপনারা আমাকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার চাপ দেবেন না। বাজার সুস্থ ধারায় ফিরলে এমনিতেই আমরা এটি তুলে নেব। এ জন্য একটু সময় দরকার।’বাজারসংশ্লিষ্টরা বৈঠকে তাঁদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। কেউ কেউ সব ধরনের ‘পরিদর্শন বা তদারকি’ বন্ধের প্রস্তাব করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দু-চারজন লোকের জন্য সবাই কষ্ট পাক, সেটি আমরাও চাই না। এ কাজ না করতে হলে আমাদেরই সুবিধা। কিন্তু ঘটনা যখন ঘটে তখন আদালত থেকে আমাদের কাছে চিঠি আসে। তখন আমাদের আদালতে দৌড়াতে হয়। কাউকে হয়রানি করা আমরা পছন্দ করি না। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আমাদের এ কাজটি করতে হয়। তারপরও যতটা সম্ভব কম করার চেষ্টা করি।’বৈঠকে জোর করে শেয়ার বিক্রি বা ফোর্সড সেলের বিষয়টিও উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বর্তমানে বাজার খারাপ বলে আমরা অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করছি।’ এ সময় যাঁরা কষ্টের টাকা বাজারে বিনিয়োগ করেছেন তাঁদের বিষয়ে কিছুটা সহনশীল থাকতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় বিএসইসি। ফোর্সড সেল না করায় এ সময়ের জন্য যদি কারও কোনো সমস্যা হয়, সেটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে দেখা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়।বিএসইসি বলেছে, বাজার খারাপ বলে ফোর্সড সেলের মাধ্যমে নিরপরাধ বিনিয়োগকারীর ক্ষতি করাটা কতটা যৌক্তিক, তা–ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেবে দেখা দরকার। সে ক্ষেত্রে মাসে মাসে ফোর্সড সেল না করে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে করা যায় কি না, সেটিও বিবেচনার জন্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সাধারণত শেয়ারবাজারে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে ঋণসুবিধা দিয়ে থাকে। বাজার পড়তে থাকলে শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার নিচে নামতে থাকলে ঋণ সমন্বয়ে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এটিকেই জোর করে বিক্রি বা ফোর্সড সেল বলা হয়।এদিকে বর্তমান মন্দাবাজারে গতি সঞ্চার করতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সব কটি প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সক্রিয় হতে বিএসইসির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, ‘আপনারা সবাই মিলে বাজারে গতি ফিরিয়ে আনেন। সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যেসব আলোচনা এখন হচ্ছে, সেগুলোর আর দরকারই হবে না। অনেকেই টাকা নিয়ে বসে আছেন। শুধু বাজারে গতি নেই বলে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না।’

Share this news