শেয়ারবাজারের পাগলা ঘোড়া

Date: 2023-01-07 00:00:12
শেয়ারবাজারের পাগলা ঘোড়া
কোনো কোনো দিন লেনদেনের শুরুতেই ক্রেতাশুন্য। কিছুক্ষণ পর আবার বিক্রেতাশুন্য। আবার কোনো কোনো দিন লেনদেনের শুরুতেই বিক্রেতা উধাও। আবার কিছুক্ষণ পরই ক্রেতা নিখোঁজ। গত এক মাসের বেশি সময় যাবত শেয়ারটির এমন পাগলা ঘোড়ার মতো আচরণ। গত এক মাসে একদিনও কোম্পানিটির শেয়ার তালিকাভুক্ত অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের মতো স্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়নি। কোম্পানিটির নাম ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বহুল আলোচিত শেয়ারের নাম।শেয়ারটির আচরণে মনে হয় না বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অস্তিত্ব আছে। ইচ্ছেমতো খেয়াল খুশিমতো দৌঁড়াদৌঁড়ি করে। কাউকেই তোয়াক্কা করে না। একেবারে ভিন্ন এক চরিত্র নিয়ে আবির্ভাব ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়। বাজার ভালো-মন্দ, উত্থান-পতনের সঙ্গে এর খুব একটা সম্পর্ক নেই। সে চলে আপন গতিতে, আপন মহিমায়।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওরিয়ন ইনফিউশনের মতো যদি আর ১০টা কোম্পানি বেপরোয়া আচরণ করতো, তাহলে বাজারে শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকতো না। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বনিম্ন ছিল ৭৬ টাকা। আর সর্বোচ্চ ছুঁয়েছে হাজার টাকা। প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি।তবে শেয়ারটির দর যেমন উঠেছে, এবার তেমনিই নামছে। গত এক মাসের বাজার দর পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ ৮৪১ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এখন ৪২২ টাকা ৪০ পয়সায় নেমেছে। ১৭ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর কমেছে ৪১৯ টাকা ১০ পয়সা বা ৪৯.৮০ শতাংশ। গত এক মাসের লেনদেনে শেয়ারটি সিংহভাগ সময়ই বামে হল্টেড হয়ে ক্রেতাশুন্য থেকেছে।নতুন বছরের প্রথম পাঁচ কার্যদিবসের (০১-০৫ জানুয়ারি) লেনদেনে দেখা যায়, পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসই শেয়ারটি দরপতন হয়েছে। এরমধ্যে তিন দিনই বামে হল্টেড হয়েছে। এমন প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও ডিএসইতে শেয়ারটি এক পর্যায়ে ক্রেতাশুন্য অবস্থায় পড়েছিল। তবে কিছুক্ষণ পরেই তা আবার ওপরে উঠে যায়। তারপরও ডিএসইতে শীর্ষ পতন তালিকায় পতননের শীর্ষ শিরোপা দখলে রেখেছিল।নতুন বছরের এই পাঁচ কার্যদিবসে ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৫ লাখ ১২ হাজার ৭১৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৭১ কোটি ৯১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। যা ছিল ডিএসইর সাপ্তাহিক সর্বমোট লেনদেনের ৬.৩৫ শতাংশ। বছরের প্রথম সপ্তাহে কোম্পানিটি পতনেরও শীর্ষ কোম্পানি হিসাবে উঠে এসেছে। আবার লেনদেনেরও শীর্ষ কোম্পানি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। বছরের প্রথম সপ্তাহের লেনদেন ও দরপতন-দুই রেকর্ডই কোম্পানিটির দখলে।বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বছরের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৫২৭ টাকা ৪০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৪২২ টাকা ৪০ পয়সা। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারটির দর কমেছে ১০৫ টাকা বা ১৯.৯১ শতাংশ। আগের তিন সপ্তাহেও কোম্পানিটির শেয়ার সাপ্তাহিক দরপতন তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ার যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল, সেভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে আগের অবস্থানে ফিরছে। তাঁদের মতে, শেয়ারটির কারসাজিকারিরাই শেয়ারটির অস্বাভাবিক লেনদেন খেলায় এভাবে মেতে উঠেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নাকের ডগায় ইচ্ছেমতো টেনে ওপরে তুলছে, আবার ইচ্ছেমতো টেনে নিচে নামাচ্ছে।

Share this news