শেয়ারবাজারে সূচক কমে দেড় বছর আগের অবস্থায়

Date: 2024-01-28 16:00:08
শেয়ারবাজারে সূচক কমে দেড় বছর আগের অবস্থায়
শেয়ারবাজারে নতুন আরেকটি সপ্তাহ শুরু হয়েছে দরপতনে। গতকাল রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৭ পয়েন্ট কমে ছয় হাজারের কাছাকাছি নেমে আসে। অবশ্য দরপতন হলেও লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।গত দেড় বছরের মধ্যে গতকাল এই সূচকের অবস্থান ছিল সর্বনিম্ন। ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সূচকটি ৫ হাজার ৯৮১ পয়েন্টে ছিল। এ দিন সূচকটি ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ায় আরও পতন ঠেকাতে শেয়ারের দামের ওপর ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর আরোপ করা হয়েছিল। এর ফলে সূচক আর কখনো ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নামেনি।দেড় বছর পর প্রথম দফায় ২১ জানুয়ারি থেকে ৩৫টি বাদে বাকি সব কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৩ জানুয়ারি থেকে তুলে নেওয়া হয় আরও ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস। যদিও গত তিন কার্যদিবস টানা পতন হয়েছে সূচকের। গতকাল দিন শেষে এটি কমে ৬ হাজার ৭৯ পয়েন্টে নেমে আসে।সূচক আবারও ছয় হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি নেমে আসায় গতকাল সপ্তাহের প্রথম দিন বাজারে ছিল শেয়ার বিক্রির চাপ। শেয়ারবাজারের একাধিক শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা জানান, ২১ থেকে ২৮ জানুয়ারি—ছয় কার্যদিবসে কিছু কিছু শেয়ারের দাম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। তাতে অনেক কোম্পানির শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়েছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ফোসর্ড সেল শুরু করায় শেয়ারের দাম আরও দ্রুত কমছে।শেয়ারবাজারে যাঁরা ঋণ করে বিনিয়োগ করেন, তাঁরা নিজেদের বিনিয়োগ করা অর্থের বিপরীতে ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে ঋণ নেন। শেয়ারের দাম কমে গেলে তখন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দেওয়া ঋণ সমন্বয় করতে বিনিয়োগকারীদের ওই শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ঋণচুক্তিতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে এ বৈধতা দেওয়া থাকে। তাই অনেক ক্ষেত্রে শেয়ারের দাম বেশি কমে গেলে তখন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীকে না জানিয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এটি শেয়ারবাজারে ফোর্সড সেল হিসেবে পরিচিত।শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ফোর্সড সেল যখন বেড়ে যায়, তখন বাজারে ক্রেতাসংকট দেখা দেয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন নতুন বিনিয়োগও কমে যায়। টানা পতনের কারণে শেয়ারবাজারে এখন সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর বাজার কিছুটা পড়ে যাবে—এ ধারণা প্রায় সবারই ছিল। তাই বাজারের এ পতন আমার কাছে খুব বেশি অপ্রত্যাশিত নয়। তবে বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমার পরামর্শ, কারও ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ থাকলে আতঙ্কিত হয়ে তাঁর সেসব শেয়ার বিক্রির কোনো দরকার নেই। সাময়িকভাবে এসব শেয়ারের দাম কমলেও তা ঘুরে দাঁড়াবে।’সূচক নিয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর বৈঠকসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সূচকের বার্ষিক সমন্বয় করতে গিয়ে ডিএসইএক্স থেকে ৮৩ কোম্পানির বাদ পড়া ও কারসাজির শেয়ার সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএসইসি। গতকাল বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ। ডিএসইর পক্ষে ছিলেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ টি এম তারিকুজ্জামানসহ সূচক কমিটির সদস্যরা।বৈঠকের বিষয়ে জানতে বিএসইসি ও ডিএসইর সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাদ পড়া কোম্পানিগুলোকে সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা বা নতুন করে সূচকটি সমন্বয়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।গতকাল প্রথম আলোতে ‘সূচকে কারসাজির শেয়ারের দাপট, যাচ্ছে ভুল বার্তা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এতে বলা হয়, শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসের কারণে লেনদেন না হওয়ায় সূচকটি সমন্বয় করতে গিয়ে ভালো অনেক কোম্পানি বাদ পড়েছে। তার বিপরীতে কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া বন্ধ থাকা কিছু কোম্পানি সূচকে ঢুকে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ বিষয়ে ডিএসইর কাছে জানতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।প্রথম আলোর প্রতিবেদনের বিষয়ে গতকাল ডিএসইর পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, এসঅ্যান্ডপির পদ্ধতি অনুসরণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় এ সমন্বয়ের কাজটি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করা হয়েছে। এসঅ্যান্ডপির পদ্ধতি অনুযায়ী, এ সূচকে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ছয় মাসের দৈনিক গড় লেনদেন ১০ লাখ টাকা হতে হয়। ফ্লোর প্রাইসের কারণে গত বছরের শেষ ছয় মাসে ডিএসইতে লেনদেন অনেক কমে যায়। ফলে সূচকে থাকা অনেক কোম্পানি ন্যূনতম লেনদেনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তাই সেগুলো বাদ পড়ে। এ নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীসহ বাজারসংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়।

Share this news