শেয়ারবাজারে নানান কৌশলে হচ্ছে কারসাজি

Date: 2023-02-20 00:00:15
শেয়ারবাজারে নানান কৌশলে হচ্ছে কারসাজি
শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রকদের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে চলে কারসাজি চক্র। এই চক্র প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পদ্ধতিতে তাদের কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে নিয়ন্ত্রকদের পরিশ্রম ও আধুনিক প্রযুক্তি সবই মার খেয়ে যাচ্ছে। এসব কারসাজি ধরতে অটোমেশন করা হচ্ছে, তেমন কথায় ফুঠে ওঠলো সংবাদ সম্মেলনে।সোমবার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভবনে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশন্সের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব মনোভাব প্রকাশ করেন। উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, মাহবুব আলম, নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রমুখ।সব খানেই কারসাজি হচ্ছে এমন মন্তব্যে করে সাইফুর রহমান বলেন, গোটা বিশ্বে শেয়ারবাজারে কারসাজি হয়। সুতরাং কারসাজি একেবারে বন্ধ হবে, সেটা বলা যাবে না। কারণ কারসাজির এক পথ বন্ধ করলে, তারা নতুন নতুন পথে বের করে। নতুন পথে বিভিন্ন কৌশল তারা কারসাজি করে। যা পুরোনো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে থাকে। এই অবস্থায়ও আমরা থেমে নেই, প্রতিনিয়ত আমরা কাজ করছি, কারসাজি ধরতে।আরও বলেন, কারসাজি চক্র ধরতে বিএসইসিতে অটোমেশন করা হচ্ছে। যাতে কারসাজি শুরুতে চিহ্নিত করা যায়, যাতে এ কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে তাদের শাস্তি দেওয়া যায়।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুর রহমান বলেন, বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগ প্রতিনিয়তই কারসাজি চক্রকে শাস্তি দিচ্ছে। তাদের শাস্তি যেন আরও বেশি হয়, সে বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে। গুরুত্ব দিয়ে সেই কাজ শেষ করা হচ্ছে। এছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হচ্ছে। তাদের উপযুক্ত শান্তির লক্ষে প্রয়োজনীয় আইনে সংযোজন আনা হচ্ছে। যাতে শেয়ারবাজারে অন্যায় করে কেউ পার না পায়।সম্মেলনে আরেক এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, শেয়ারবাজারের স্বাস্থ্য ভালো হলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে।আরও বলেন, ফ্লোর প্রাইজের কারণে বর্তমানে লেনদেন কম হচ্ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার কারণে ফ্লোর প্রাইজের ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেনি বলে দাবি করেন।অটোমেশন হলে জালিয়াতি ও কারসাজি কমে আসবে মন্তব্যে করে রেজাউল করিম বলেন, এপিআরসির সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা, আইন এবং অন্যান্য দেশের কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশ সেখান থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেবে।শেয়ারবাজারে অন্যায়কারীদের শাস্তি প্রসঙ্গে রেজাউল করিম বলেন, গত দুই বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও জরিমানা করা হয়েছে তা অন্যান্য বাজারের চেয়ে অনেক বেশি।এদিকে প্রথমবারের মত ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আইওএসকো-এপিআরসির ২দিন ব্যাপী সভা শুরু আগামী বুধবার। শেষ আগামী বৃহস্পতিবার। সভাগুলো অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর শেরাটন ঢাকা হোটেলে।বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে সুপারভাইজরি পরিচালক সভা। শেষ হবে বেলা ১২ টায়। একইদিনে দুপুর দেড়টায় শুরু হবে এনফোর্সমেন্ট পরিচালক সভা। শেষ হবে বিকাল ৪ টায়। সভা দুটির সভাপতিত্ব করবে বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং আইওএসকো- এপিআরসির ভাইস চেয়ার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।সভা দুটিতে বাংলাদেশ সহ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নেপাল সহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা সহ তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া সভায় সারা বিশ্বের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান আইওএসকোর সচিবালয় ও স্পেনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।পরের দিন বৃহস্পতবার সকাল ৯ টায় শুরু হবে এপিআরসি পূর্ণাঙ্গ সভা। শেষ হবে বিকেল ৪ টায়। এর মাধ্যমে ২দিন ব্যাপী সভার সমাপ্ত হবে। সভাটির উদ্বোধন করবে আইওএসকো- এপিআরসির চেয়ার শিগেরু আরিজুমি। স্বাগত বক্তব্য ও সভার অলোচ্য সূচির অনুমোদন করবেন শিগেরু আরিজুমি ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।সমাপনী অনুষ্ঠান ও গালা ডিনার অনুষ্ঠিত হবে ওইদিন বৃহস্পতিবার সন্ধায়। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাপনী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।এপিআরসি সভায় বাংলাদেশ, ভারত, হংকং, সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিরা বিনিয়োগ শিক্ষা ও বিনিয়োগ আচরণ, নিয়ন্ত্রক প্রযুক্তি, অনলাইনে ব্রোকারেজ ও পরামর্শ পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় পক্ষের সেবা গ্রহণের সমস্যা ও সমাধান, বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্তের উপর প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের মানের প্রভাব, যারা ভূয়া গ্রাহক হিসাব খুলে এর মাধ্যমে শেয়ারবাজার কারসাজি ও ইনসাইডার ট্রেডিং করে তাদের খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জ, অত্যাধুনিক সিন্ডিকেট কর্তৃক বিভিন্ন উপায়ে শেয়ারেরবাজার মূল্য বৃদ্ধি ও তার উপর নজরদারী সহ শেয়ারবাজার সংক্রান্ত আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই সভা আয়োজনের মাধ্যমে দেশ ও দেশের শেয়ারবাজার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও পরিচিতি পাবে। পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে, সংশ্লিষ্ট আইন কানুনের সাথে সমন্বয় করে দেশের শেয়ারবাজার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধি সহ দেশের শেয়ারবাজারের টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আইওএসকোর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৩৩। বিএসইসি ২০১৩ সাল থেকে আইওএসকোর সর্বোচ্চ মান ‘এ’ শ্রেণীর সদস্য হিসেবে রয়েছে। আইওএসকোর ৪টি আঞ্চলিক কমিটির মধ্যে এপিআরসি অন্যতম। বর্তমানে ভারত, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া সহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২১ টি দেশ এই আঞ্চলিক কমিটির সদস্য।

Share this news