শেয়ারবাজারে নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা বাড়ছে

শুধু সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে কেনাবেচায় সুবিধা নিতে নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা বাড়ছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ৪৪টি কোম্পানি সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৬টি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে শূন্য দশমিক ২৫ থেকে ১ শতাংশ। লোকসান থাকলেও ১০টি কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আইন অনুযায়ী কোনো হিসাব বছরে কোনো কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ না দিলে সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে ওই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি হয় পাঁচ দিনে। লভ্যাংশ যত সামান্য বা যত বেশিই হোক না কেন, এমন কোম্পানির লেনদেন নিষ্পত্তি হয় তিন দিনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমীন সমকালকে বলেন, কিছু কোম্পানির মালিক কোম্পানির ব্যবসা থেকে নিজেদের কোম্পানির শেয়ার নিয়ে ব্যবসা করেন বেশি। সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে লেনদেন যাতে সহজে করা যায়, তার জন্যই এমন লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়।বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়া উৎপাদন ও সেবা খাতের সব কোম্পানির হিসাব বছর জুলাই মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় জুনে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশীয় উৎপাদন ও সেবা খাতসংশ্লিষ্ট ২২৮ কোম্পানির মধ্যে ৫১টি গত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও আরও অন্তত ২২ কোম্পানি লভ্যাংশ সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কোনো পর্ষদ সভাই ডাকেনি। লভ্যাংশ না দেওয়া এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া এমন কোম্পানি মোটের এক-তৃতীয়াংশ। উৎপাদন ও সেবা খাতের ১৫৫টি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কম-বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ৩০ টাকা করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ।পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৫৫ কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও ৫ শতাংশ বা তার কম হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৬৬টি কোম্পানি। এর মধ্যে ১৬টি নামমাত্র (১ শতাংশ বা তারও কম) লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে আড়াই পয়সা হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি জাহীন স্পিনিং। শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণাকারী কোম্পানির পাশাপাশি যেসব কোম্পানি শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে, সেগুলোর নিট মুনাফা কম হয়েছে। এর মধ্যে এমনও কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো লোকসান করার পরও সামান্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। মূলত সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচায় বিশেষ সুবিধা নিতে কিছু কোম্পানি এমন লভ্যাংশ ঘোষণা করে। জুনে হিসাব বছর শেষ হওয়া ২২৮ কোম্পানির মধ্যে ২০৫টি গত ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের লাভ-লোকসানের হিসাব প্রকাশ করেছে। হিসাব অনুযায়ী ১৪৫টি কোম্পানি কম-বেশি নিট মুনাফা করেছে। আগের বছরে এ সংখ্যা ছিল ১৫৯। এ ছাড়া গত হিসাব বছরে লোকসান করেছে ৬০টি, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ৪৬টি। অর্থাৎ লোকসানে থাকা কোম্পানির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে মুনাফায় থাকা কোম্পানির সংখ্যা।মুনাফা কমার প্রবণতা অবশ্য আগে থেকেই অনুমান করা গিয়েছিল। ডলার সংকটসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে একদিকে কোম্পানিগুলোর ব্যবসার খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রিও কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মুনাফায়।গত হিসাব বছরে দেশীয় উৎপাদন ও সেবা খাতে মুনাফায় থাকা ১৪৫ কোম্পানি কর-পরবর্তী নিট ৯ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। মুনাফায় থাকা এসব কোম্পানির মধ্যে ১০টি আগের হিসাব বছরে লোকসানে ছিল, যার পরিমাণ ছিল ১৪৩ কোটি টাকা। ওই ১৪৩ কোটি টাকার লোকসান বাদ দিলেও মুনাফায় থাকা বাকি কোম্পানিগুলোর নিট ১১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল। অর্থাৎ এসব কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে অন্তত সাড়ে ১১ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২২-২৩ হিসাব বছরে যে ৬০ কোম্পানি লোকসান করেছে, টাকার অঙ্কে তাদের মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। অথচ গত বছর এসব কোম্পানির ২৫টি ৮৪১ কোটি টাকা মুনাফা করে। বাকি ৩৫টির সম্মিলিত লোকসান ছিল ৬৬১ কোটি টাকা।