শেয়ারবাজারে দু্বাইয়ের এক প্রতিষ্ঠানের বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ২ শতাংশ অর্থাৎ ৩ কোটি ৪২ লাখ শেয়ার ১১১ কোটি টাকায় কিনেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিটিএ ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট।দুবাই ভিত্তিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটির বাংলাদেশের বাজারে আরও বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, নতুন প্রতিষ্ঠিত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (বিটিএ ওয়েলথ) দুবাইতে বিএসইসি রোড শোতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। এরপরই পরীক্ষামূলকভাবে তারা ইসলামী ব্যাংকে বিনিয়োগ করেছে।বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিন্যান্সিয়াল হাব দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল সেন্টার। তাদের ওয়েবসাইট অনুসারে, আনুমানিক ৩ বিলিয়ন জনসংখ্যা ও ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি সহ ৭২টি দেশ নিয়ে গঠিত তারা।বিটিএ এর ওয়েবসাইট থেকে আরো জানা গেছে, তারা উদীয়মান বাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০২২ সালে ‘বিটিএ টাইগার ফান্ড’ নামে একটি বিনিয়োগ তহবিল গঠন করেছে।২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিটিএ ওয়েলথ। দুবাইয়ের এমিরেটস ফিন্যান্সিয়াল টাওয়ারে এর সদর দপ্তর।একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তাদের আর কোনো বিনিয়োগ নেই; ইসলামী ব্যাংকই তাদের প্রথম বিনিয়োগ।বর্তমানে, সৌদি আরব ভিত্তিক আল-রাজি কোম্পানি ফর ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং অ্যারাবাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সির যৌথভাবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পরিশোধিত মূলধনে ২২.০৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের আরও ২০.২৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৪২.২৭ শতাংশ এর মালিক বিদেশী, স্পনসর এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা।শেয়ার বাজার সূত্র থেকে জানা গেছে, এছাড়াও চারটি মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক স্পনসর – বাহরাইন ইসলামিক ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস এবং দুবাই ইসলামিক ব্যাংক ২০১৫ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকে তাদের হোল্ডিং বিক্রি করেছে বা কমিয়েছে।২০২২ সালে আমানতকারীরা ১৭,৭৮৩ কোটি টাকা তুলে নেওয়ায় তীব্র নগদ সংকটে ভুগছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ওই বছর ব্যাংকটি গ্রাহকদের জন্য ১১,৪৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে ৯৭.১১ টাকা কমেছে।২০২২ সালের শেষে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ ছিল নেগেটিভ ৫৫.৬৮ টাকা। ব্যাংকটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নগদ এবং নগদ সমতুল্য হিসেবে তাদের ২৩,৪২৯ কোটি টাকা রয়েছে।তবে, ব্যাংকটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে ২৮% বৃদ্ধি পেয়ে ৬১৬ কোটি টাকা হয়েছে। গত বছর ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৩.৮৪ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ২.৯৯ টাকা।ব্যাংকটি ২০২২ সালে এর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।বড় আকারের ঋণ বিতরণে ব্যাংকটির কথিত অনিয়ম সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকের ওপর আমানতকারীদের অবিশ্বাস বেড়ে যায়।চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকটি থেকে ২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে আমানতকারীরা। এর ফলে মার্চ ত্রৈমাসিকে ব্যাংকটির মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ শতাংশ কমে ৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকা হয়েছে।২০১৭ সালের প্রথমদিকে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে এর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়।