শেয়ারবাজারে দুই কোম্পানির রেকর্ড
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর দুই কোম্পানির শেয়ার আজ মঙ্গলবার সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ কোম্পানি দুটি দরের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড করেছে। কোম্পানি দুটি হলো-জেমিনি সী ফুড ও লিগ্যাছি ফুটওয়ার লিমিটেড। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।কোম্পানি দুটির শেয়ারদর অস্বাভাবাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড দরে লেনদেনের বিষয়ে কোম্পানি দুটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। যে কারণে ডিএসই কর্তৃপক্ষ কোম্পানি দুটির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বারংবার সতর্কবার্তা জারি করেছে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই কোম্পানি দুটির শেয়ারদর। লাগামহীনভাবে আকাশে উড়াল দিয়েছে।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ার দুটিতে কারসাজি চক্র যে জড়িত, সেই বিষয়ে কোনো রকম সন্দেহ নেই। তাদের অভিযোগ, শেয়ার দুটির দর আকাশচুম্বী করার পেছনে কোম্পানি দুটির লোকজনেরও হাত রয়েছে। এছাড়া, নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজনেরও ইন্ধন রয়েছে। যে কারণে মন্দা বাজারেও শেয়ার দুটির অস্বাভাবিক চোখ রাঙ্গানি সবাই চেপে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক দর হাঁকানোর বিষয়ে কোনো রকম টু-শব্দ পর্যন্ত নেই।বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৩ মার্চ লিগ্যাছি ফুটওয়্যারের শেয়ারদর ছিল ৩৯ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার আজ লেনদেন হয়েছে ৯৮ টাকা ৫০ পয়সায়। তবে দিনশেষে ক্লোজিং হয়েছে ৯২ টাকা ৪০ পয়সায়। যা কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির সর্বোচ্চ রেকর্ড দর।আজকের শেয়ারদর অনুযায়ি মাত্র ১২ কর্মদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৫৩ টাকা ৪০ পয়সা বা প্রায় ১৩৭ শতাংশ।সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ি, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে বা ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’২২) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৭৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১১ পয়সা।সর্বশেষ ২০২২ সালে কোম্পানিটি ‘নো ডিভিডেন্ড’ দিয়েছে। তার আগের বছর ২০২১ সালে ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এর আগেও অনেক বছর কোম্পানিটির ‘নো ডিভিডেন্ড’ দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ০৪ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৯ টাকা ৮৩ পয়স। অর্থাৎ মুনাফা, ডিভিডেন্ড ও সম্পদ মূল্যে কোম্পানি পেছনের দিকে হাঁটছে, আর শেয়ার দরে চলছে তাক লাগানো বিস্ময়।কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে মাইনাস ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ধারে-কর্জে চলছে কোম্পানিটির কার্যক্রম। অথচ কোম্পানিটির শেয়ার দরে চলছে বাজিমাত।অন্যদিকে জেমিনি সী ফুডের গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শেয়ারদর ছিল ৩৪১ টাকা ৭০ পয়সা। আজ কোম্পানিটির শেয়ার ৬৫৬ টাকায় হল্টেড হয়ে যায়। যদিও দিনশেষে ক্লোজিং দর হয়েছে ৬১৮ টাকা ৬০ পয়সা। এর আগেও বহুদিন কোম্পানিটির শেয়ার মন্দাবাজারে বিক্রেতা সংকট তৈরি করে হল্টেড হওয়ার রেকর্ড করেছে।গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে ২৯৫ টাকা ২০ পয়সায়। সেই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ারদর আজ বেড়েছে ৩২৩ টাকা ৪০ পয়সা বা প্রায় ১১০ শতাংশ।আজ কোম্পানিটির শেয়ার ক্লোজিং হয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২০ অক্টোবর বড় ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর শেয়ারটি লেনদেন হয়েছিল ৬০০ টাকার ঘরে। এবার ডিভিডেন্ড ঘোষণা বা কোনো মূল সংবেদনশীল তথ্য নেই, তারপরও শেয়ার দর লাগামহীন।সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ি, চলতি অর্থবছরের দুই প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর’২২) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭ টাকা ১০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৯৪ পয়সা। কোম্পানিটির অস্বাভাবিক মুনাফা নিয়েও অনেক বিতর্ক রয়েছে। এই বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছিল, কোম্পানিটির অস্বাভাবিক মুনাফার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৭ টাকা ১৮ পয়সা। অর্থাৎ ১৭ টাকা ১৮ পয়সার শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৬১৮ টাকা ৬০ পয়সায়।সর্বশেষ কোম্পানিটি ২০২২ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ৩০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তার আগের বছর ২০২১ সালে দিয়েছিল ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড। এর আগে ‘নো ডিভিডেন্ড’ দেওয়ারও রেকর্ড রয়েছে কোম্পানিটির। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ‘নো ডিভিডেন্ড’ দিয়েছিল। ওই বছর শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ৯ টাকা ৮৩ পয়সা।কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৬ কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার টাকা। বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা।