শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আস্থার পরিবেশ গড়ুন

Date: 2023-03-24 10:00:14
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আস্থার পরিবেশ গড়ুন
শেয়ারবাজারের স্বার্থে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. আব্দুল হালিম বলেন, আসুন সবাই মিলে এমন একটা পরিবেশ তৈরী করি, যে পরিবেশে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আস্থা পায়। এতে সবাই লাভবান হবে। পাশাপাশি শেয়ারবাজারের উন্নয়নের হবে। একই সাথে দেশের অর্থনীতিতে শেয়ারবাজারের অবদানও বাড়বে।গতকাল বৃহস্পতিবার নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ার মাল্টিপারপাস হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃক আয়োজিত ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির সিইও এবং কমপ্লায়েন্স অফিসারদের জন্য Effective Compliance of Securities Related Laws” শীর্ষক দুই দিনব্যাপি (২১ ও ২৩ মার্চ) সচেতনতা মূলক কর্মশালায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম, পরিচালক মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম মজুমদার এবং অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। কর্মশালায় পেপার উপস্থাপন করেন ডিএসইর প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ।মো. আব্দুল হালিম বলেন, অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি রুলস এবং রেগুলেনসগুলোর সঠিক পরিপালন না করার পিছনে দুটো কারণ রয়েছে। প্রথমত জানার ঘাটতি বা অজ্ঞতা। দ্বিতীয়ত ইচ্ছাকৃত৷ এখানে আমরা যারা উপস্থিত হয়েছি সকলেই চাই পুঁজিবাজার উন্নত হোক। পুঁজিবাজার উন্নত হলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট আমরা সকলেই লাভবান হবে। আমাদের সকলের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন, আর তা হলো- পুঁজিবাজারের উন্নয়ন। আর এই উদ্দেশ্য পূরণে আমাদের সকলের বিএসইসির যে রেগুলেশন ও কমপ্লায়েন্সগুলো রয়েছে সেগুলোর লঙ্ঘন না করে সঠিকভাবে এগুলো পরিপালন করতে হবে।পুঁজিবাজারে কাজ করতে হলে বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এ সংক্রান্ত সকল আইন-কানুন, বিধি-বিধান ও প্রবিধানসমূহ ভালভাবে জানতে হবে এবং এর সঠিক প্রয়োগও করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই জানার মধ্যে যে গ্যাপ রয়েছে তা পূরণে এ প্রবিধানমালাসমূহ আরও ভালোভাবে জানানো এবং আপডেট করার জন্য আজকের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন। কনসোলিটেড কাষ্টমার একাউন্টে (সিসিএ) কোন ঘাটতি হলে তাত্ক্ষণিকভাবে এটা এক্সচেঞ্জকে জানাতে হবে। রুলস যখন প্রয়োগ করা হয় তখন সেখানে একটা উদ্দেশ্য থাকে। আমাদের এইসব রুলসগুলো কমপ্লায়েন্স করতে হবে। এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে তা সাথে সাথে কমিশনকে জানাতে হবে। যখন আপনারা বা ট্রেকহোল্ডাররা জানাননি আমাদের পরিদর্শনের সময় যখন এটা ধরা পড়ে তখন এটা ভায়োলেশন হয়ে যায়। আমাদের অভিন্ন উদ্দেশ্য পূরণে আমাদের সকলের মধ্যে একটা আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা থাকতে হবে। অতীতের ভুলভ্রান্তি যা হয়েছে, তার জন্য কাউকে দোষারোপ না করে, যেসব বিধি বিধান আমাদের সামনে রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে পরিপালনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় সকলকে একসাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।আরও বলেন, কিছু হাউজ বা ট্রেকহোল্ডারের বোর্ডের সমস্যা রয়েছে। চেয়ারম্যান বা পরিচালকের ভেতর দ্বন্দ্ব, সংঘাত হচ্ছে এবং অডিটেড ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সময়মত জমা না দেয়া ও স্বচ্ছতা বজায় না রাখা এগুলোর সমাধান করতে হবে এবং প্রবিধানসমূহের সঠিক পরিপালন করতে হবে। এখানে আজ যারা উপস্থিত রয়েছেন, আপনারা যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ। আপনাদের স্ব স্ব হাউজ যদি নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে চালান তাহলে ডিএসই বা কমিশনের জন্য আপনাদের পর্যবেক্ষণ বা মনিটর করা সহজ হবে এবং আপনাদের সাথে আস্থার সম্পর্ক যত দৃঢ় হবে, আপনাদের ওখানে পরিদর্শন বা ইন্সপেকশনের সংখ্যাও তত কমে আসবে। প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে পরিদর্শন যাতে কম হয় তার জন্য আইন কানুন ও বিধি বিধানের সঠিক পরিপালনের মাধ্যমে আপনাকে এগিয়ে আসতে হবে।এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম সাইফুর রহমান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এই কর্মশালার উদ্দেশ্য হচ্ছে কার্যকর কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা৷ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার একটি রেগুলেটরি কাঠামো রয়েছে। সেই রেগুলেটরি কাঠামো নিশ্চিতভাবে পরিপালনের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীগনের স্বার্থে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব। বিএসইসি এই রুলস এবং রেগুলেশনের কার্যকর প্রয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপ করছেন। ইতোপূর্বেও বিভিন্ন ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিচালকদের জন্যেও প্রশিক্ষণ কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে। বিএসইসি এবং ডিএসই আশা করছে যে, এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে সিকিউরিটিজ সম্পর্কিত যে আইন-কানুন রয়েছে সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন তথা এই কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে পারব৷ আর এই কমপ্লায়েন্সের মাধ্যমেই বাজারে মূলতঃ ক্যাপিটাল সম্প্রসারণ করা সম্ভব।কর্মশালায় পেপার উপস্থাপন করে ডিএসইর প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ বলেন, এই অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য হলো: ক্লায়েন্ট/বিনিয়োগকারীদের তহবিল ও সিকিউরিটিজের নিরাপত্তা, সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইনের পরিপালন এবং ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা৷ অনিয়ম রোধে বিএসইসি কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সিসিএ থেকে নগদ উত্তোলন নিষিদ্ধ করা, মাসিক ভিত্তিতে সিসিএ মনিটর করতে ডিএসইকে নির্দেশনা, অনলাইনে মাসিক সিসিএ রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে ডিএসইকে নির্দেশনা, সিসিএ-তে ঘাটতি পাওয়া গেলে কিছু শর্ত আরোপের নির্দেশনা জারি, ডিএসইকে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা, ডিএসইকে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির সিইও এবং কমপ্লায়েন্স অফিসারদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা, ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের জন্য স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার প্রবর্তন। অনিয়ম রোধে ডিএসই কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: মাসিক ভিত্তিতে সিসিএ পর্যবেক্ষণ করা, ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলিতে পরিদর্শনের সংখ্যা বাড়নো, সিসিএ রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি, সিসিএতে ঘাটতি পাওয়া গেলে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী শর্ত আরোপ করা,ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির সিইও এবং কমপ্লায়েন্স অফিসারদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করা এবং ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যবস্থা করা৷ এছাড়াও তিনি প্রধান নন কমপ্লায়েন্স এবং প্রধান প্রধান কমপ্লায়েন্সের মাসিক, ত্রি-মাসিক, অধবার্ষিকী ও বার্ষিকী বিষয়গুলো আলোচনা করেন।

Share this news