সী পার্ল কী আলাদিনের চেরাগ
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সেবা ও আবাসন খাতের কোম্পানি সী পার্ল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট যেন এক আলাদিনের চেরাগ। পতনের বাজারেও এই শেয়ারটি অব্যাহত গতিতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে। যেন এর দর বৃদ্ধির কোন অন্ত নেই, নেই কোনো অভিভাক বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের মতে, অতি মূল্যায়িত এই শেয়ারটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার জন্য নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কারসাজিকারিরা দর বাড়িয়ে চলেছে। দুর্বল মৌলভিত্তির এই শেয়ারটির দর বহু আগেই অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়েছে, যা এখন বিপজ্জক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।আরও পড়ুন:চেক নগদায়নে বিএসইসির অবস্থান পরিবর্তনেও থামছে না পতনআগের দিন রোববার কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ১৭৩ টাকা ৭০ পয়সা। আজ সর্বোচ্চ দর উঠেছে ১৮৯ টাকা ৭০ পয়সা। তবে সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮৮ টাকায়। এই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার আজ বেড়েছে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা বা ৮.২৩ শতাংশ। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার তালিকাভুক্তির পর সর্বোচ্চ রেকর্ড দর হাঁকাল।কোম্পানিটির আজ ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৫৯০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজারমূল্য ৩৩ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা।কোম্পনিটির বাজারদর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত দুই বছর যাবত কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়েছে। গত ৭ আগস্ট দাম হঠাৎ করে ৫০ টাকার নিচে থেকে ১৪০ টাকার কাছাকাছি উঠে যায়। এই সময়ে কোম্পানির দর বেড়েছে ৯০ টাকা বা ১৮০ শতাংশ। আজ সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১৮৯ টাকা ৭০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮৮ টাকা। এই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৩৮ টাকা বা ২৭৬ শতাংশ।গত এক বছরে কোম্পানিটির দর সর্বনিম্ন ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১৮৯ টাকায় ৭০ পয়সায় ওঠা নামা করেছে।৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সমাপ্ত ১ম প্রান্তিকের প্রান্তিকে মুনাফা দেখিয়েছে ১ টাকা ২৭ পয়সা। যা গত বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৯ পয়সা। হঠাৎ ইপিএস এত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। হঠাৎ কি এমন ঘটেছে যে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে অবিশ্বাস্য হারে!বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, কারসাজি চক্ররা যাতে মার্জিনের মাধ্যমে সী পার্লের শেয়ার তাদের ঘাড়ে চাপাতে পারে, সেই উদ্দ্যেশ্যেই হঠাৎ প্রথম প্রান্তিকের মুনাফা এভাবে উল্লম্ফন করে দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলার মূল কৌশল অবলম্বন করেছে কারসাজি চক্রটি।বিনিয়োগকারীরা আরও বলছেন, প্রথমত ইপিএস বেশি দেখিয়ে, দ্বিতীয়ত ব্লক মার্কেটে প্রতিদিন লেনদেনে চমক দেখিয়ে কারসাজি চক্রটি অতি মূল্যায়িত এই শেয়ারটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ফাঁদ তৈরি করছে।২০১৯ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন মূলধন ২০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৪৬.৮৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৬.৯৬ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৬.২১ শতাংশ শেয়ার।চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২২) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ২৭ পয়সা। এর আগের বছর শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৯ পয়সা। এতো বড় মুনাফা দেখানো পরও কোম্পানিটির পিই রেশিও অবস্থান করছে ৩৭.০১ পয়েন্টে।