ঋণগ্রস্ত আছিয়া সী ফুডের ক্যাশ ফ্লো নেগেটিভ: ব্যাপক ঝুঁকিতে বিনিয়োগ

পুঁজিবাজারে এসএমই প্লাটফর্মে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে আছিয়া সী ফুড লিমিটেড। কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিআইও) মাধ্যমে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। কিন্তু এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আছিয়া সী ফুড সর্বপ্রথম প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) জন্য ২০১৮ সালে আবেদন করে। কিন্তু কোম্পানির ফ্যাক্টরী খুলনাতে পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স না পাওয়ায় এর আইপিও বাতিল করে দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পরবর্তীতে এসএমই প্লাটফর্মের জন্য পুনরায় পুঁজি উত্তোলনের আবেদন করা হয় যার অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কোম্পানির সর্বশেষ দাখিল করা প্রসপেক্টাসে দেখা যায়, এর শেয়ার প্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) নেগেটিভ (৪.৪৩) টাকা। এছাড়া ক্যাশ ফ্লো রেশিও দাঁড়িয়েছে (২.৩৫) অর্থাৎ নেগেটিভ যা কোম্পানির ব্যবসা থেকে পর্যাপ্ত আয় হচ্ছে না বুঝায়। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিজ) রুলস,২০১৬’তে ক্যাশ ফ্লো নেগেটিভকে অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি (রিস্ক ফ্যাক্টর) হিসেবে তুলে ধরেছে।এদিকে আছিয়া সী ফুডের শুধুমাত্র স্বল্প মেয়াদি ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটি ২০ লাখ ২৭ হাজার ৪২১ টাকা। কোম্পানির বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪০ টাকা। অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে অনেক বেশি স্বল্প মেয়াদি ঋণের পরিমাণ। আছিয়া সী ফুডের ফ্যাক্টরী, অন্যান্য সম্পদ মার্কেন্টাইল ব্যাংক, খুলনা ব্রাঞ্চের নিকট বন্ধক রয়েছে।একদিকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ অন্যদিকে ক্যাশ ফ্লো নেগেটিভ। সবমিলিয়ে ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে আছিয়া সী ফুড।এদিকে কিআইও থেকে উত্তোলিত অর্থের ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যাংক লোন পরিশোধ করবে আছিয়া সী ফুড যা গণ প্রস্তাবের অর্থাৎ ১৫ কোটি টাকার এক তৃতীয়াংশের বেশি। যদিও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু ) রুলস, ২০১৫ এর ২১ ধারায় উত্তোলিত অর্থের এক তৃতীয়াংশের বেশি লোন পরিশোধ করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেহেতু স্মল ক্যাপ প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত হচ্ছে তাই হয়তো এই নিয়মটি মানা হয়নি। তবে স্মল ক্যাপ প্লাটফর্মের প্রথমেই যে নিয়মটি রয়েছে অর্থাৎ কিআইও পরবর্তী পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটির নিচে থাকবে সেটিও মানা হচ্ছে না।আছিয়া সী ফুডের বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ২২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪০ টাকা। কিআইও থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলনের পর পরিশোধিত মূলধন ৩৭ কোটি অতিক্রম করবে যা আইনের লঙ্ঘন।উল্লেখিত বিষয় নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আছিয়া সী ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: তরিকুল ইসলাম জহির ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকমকে জানান, আমাদের অনেক টাকা দেশের বাহিরে আটকে আছে সেগুলো আদায় করতে না পারায় ক্যাশ নেগেটিভ হয়ে গেছে। কোভিড-১৯ এর কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এদিকে মূলধন বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে ওয়েভার পেয়েছি। এছাড়া কিভাবে কি করেছে এগুলো ইস্যু ম্যানেজার ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।