রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ৯.৮০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

Date: 2023-02-23 20:00:15
রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ৯.৮০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি
বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিস্থিতি ঠিক রাখতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে মোট ৯৮০ কোটি ডলার (৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো বছরে এত বেশি পরিমাণ ডলার বাজারে বিক্রি করেনি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছর পুরো সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করে। তবে চলতি অর্থবছরের আট মাসে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রির পেছনে কারণ ছিল মূলত ডলার সরবরাহ কমে যাওয়া। ফলে বাজারে ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আট মাসে রেকর্ড ৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে ব্যাংক থেকে প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এতে অভ্যন্তরীণ তারল্যের ওপর চাপ বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে এমনিতেই সঞ্চয় প্রবণতা কমছে। কয়েকটি ব্যাংকের জালিয়াতির তথ্য জানাজানির পর কোনো কোনো ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। টাকার সংকট মেটাতে আমানতের সুদহার বাড়াচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। যদিও ঋণের সুদে ৯ শতাংশের সীমা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা কমে এক লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে সাত মাসে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ৪৩ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। মূলত ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোর প্রচুর অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। ফলে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে ব্যাংকগুলোয়। এজন্য অতিরিক্ত তারল্যে হাত দিতে হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭৪৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। মূলত গত বছরের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে কেনার চাহিদা বাড়তে থাকে। নিয়মিতভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত বুধবার দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের একই সময়ে যা ৪৫ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার ছিল। আগামী মাসের মধ্যে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) দেনা পরিশোধ করতে হবে। ফলে রিজার্ভ আরও কমবে। অবশ্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে আইএমএফের পদ্ধতি অনুসরণ করে হিসাব করলে নিট রিজার্ভ এখন ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।শুধু সরকারি এলসির দায় মেটাতে বর্তমানে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সার, জ্বালানি ও জরুরি খাদ্যপণ্য আমদানির বিপরীতে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোকে ডলার দেয়া হয়। এর বাইরে জ্বালানি আমদানির জন্য বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের কিছু ডলার দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ১০১ টাকায় ডলার বিক্রি করলেও ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স কিনছে নির্ধারিত ১০৭ টাকা দরে। রপ্তানি বিল নগদায়ন হচ্ছে ১০৩ টাকায়। এ ছাড়া ডলার কেনার গড় দরের সঙ্গে কিছু লাভ যোগ করে আমদানি দায় নিষ্পত্তি হয়।তবে সুখবর দিচ্ছে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। এ দুই ধারা এখন ইতিবাচক। এর বিপরীতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে আমদানি কমছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে তিন হাজার ২৪৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে, যা প্রতি মাসে গড়ে ৪৬৪ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে গড়ে ৫২০ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে বেড়েছে রেমিট্যান্স। জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়েছে। এ মাসে দেশে এসেছে ১৯৬ কোটি ডলার। আগের মাস ডিসেম্বরে এটি ছিল প্রায় ১৭০ কোটি ডলার।

Share this news