রিজার্ভ নেমেছে ৩১ বিলিয়নে

Date: 2023-03-08 20:00:11
রিজার্ভ নেমেছে ৩১ বিলিয়নে
বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমে ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে এই রিজার্ভ ৭ বিলিয়ন ডলার কম; ২৪ বিলিয়ন ডলার। ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্তে আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভের হিসাব করতে রাজি হয়েছে সরকার; তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই হিসাব এখনো প্রকাশ করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। মঙ্গলবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১০৫ কোটি (১.০৫ বিলিয়ন) আমদানি বিল পরিশোধ করা হয়। বুধবার (৮ মার্চ) তা সমন্বয় করা হয়েছে; শবে বরাতের ছুটির কারণে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ধ ছিল। সমন্বয়ের পর রিজার্ভ কমে কত হয়েছে, তার প্রকৃত হিসাব আজ বৃহস্পতিবার জানা যাবে; সেটা ৩১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত দেড় বছরে রিজার্ভ কমেছে ১৭ বিলিয়ন ডলার। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে ৪৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। এক বছর আগে গত বছরের ১ মার্চ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার।জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৩২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। তার আগে ছিল প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসের আমদানি ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে মোট ৬ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। আর আইএমএফের শর্ত মেনে হিসাব করলে এই রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের আমদানি খরচ মিটবে।আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। মহাসংকটে পড়ায় শ্রীলঙ্কা অবশ্য দুই মাস আগে আকুর থেকে বেরিয়ে এসেছে।রিজার্ভ বাড়ায় রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) পরিমাণ বাড়িয়ে ৭ বিলিয়ন ডলার করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠন করা হয় লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ)। বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে ও সোনালী ব্যাংককে অর্থ দেয়া হয়েছে। আবার পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ থেকে অর্থ দেয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়া হয়েছিল ২০ কোটি ডলার। এসব খাতে সব মিলিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি অবশ্য ইডিএফের পরিমাণ কমিয়ে ৬ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। সে হিসাবে এখন রিজার্ভের ৭ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আইএমএফ এই ৭ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব করতে বলেছে।এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্থির ডলারের বাজার সুস্থির করতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাস ৭ দিনে (২০২২ সালে ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ) ১০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে কোনো অর্থবছরের পুরো সময়েও (১২ মাস) রিজার্ভ থেকে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।সর্বশেষ গত মঙ্গলবারও রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। মূলত এ কারণেই রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাওয়ার পরও রিজার্ভ কমছে।২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে (১২ মাস, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন) রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে উল্টো প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

Share this news