রেগুলেটর হিসেবে আমাদের কাজই ক্যাপিটাল মার্কেটকে সহায়তা করা : গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুল রউফ তালুকদার বলেছেন, একটা রেগুলেটর হিসেবে আমাদের কাজই হবে ক্যাপিটাল মার্কেটকে সহায়তা করা। এই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি।সোমবার (০৩ অক্টোবর)’বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।গর্ভনর বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের দুইটা পার্ট। এর মধ্যে একটা ইক্যুইটি মার্কেট আর একটা ডেপথ মার্কেট। ইক্যুইটি মার্কেটই হলো শেয়ার মার্কেট। বাংলাদেশে এই শেয়ার মার্কেটই ডেভলপ করেছে। শেয়ার মার্কেটেরে আরেকটা অংশ যেটা আসলে বড় হওয়া উচিত সেটা হলো বন্ড মার্কেট। সেটা কিন্তু খুব বেশি গড়ে উঠেনি। সেটার সেকেন্ডারি মার্কেট আসলে ততটা ভালো কাজ করছে না। বন্ড মার্কেটকে বড় করতে যে সাপোর্ট দরকার সেটা গভর্নর হওয়ার পর বেশি অনুভব করলাম।আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে বড় সমস্যা নন পার্ফমিং লোন। নন পার্ফমিং লোন হওয়ার অনেক কারণে আছে। সেটার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ব্যাংকগুলো যে ডিপোজিট জমা নেয় এটা শর্টটার্ম ডিপোজিট নেয়। ব্যাংক শর্টটার্ম ডিপোজিট নিয়ে লংটার্ম ইনভেস্ট করে। সুতারাং এখনে একটা ম্যাচিউরিটি ইসম্যাস আছে। যেই কারণে ব্যাংকের নন পার্ফমিং লোন বেশি হওয়ার এটা একটা কারণ। শটটার্ম ডিপোজিট নিয়ে লংটার্ম ইনভেস্ট করছে। যখন এটা ফেরত দেওয়ার কথা তখন ফেরত দিতে পারছে না।গভর্নর বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়শিয়াতে উদ্যোক্তা ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে পুঁজি তুলে। অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। আর আমদের দেশে হচ্ছে ঠিক এর উল্টো। সবাই ব্যাংক থেকেই লোন নিচ্ছে। কাজেই এখনে যদি লোন পরিশোধে কোয়ার্টার মিস করেন তাহলেই তিনি ডিফল্টার হয়ে যাচ্ছেন। কাজেই আমি মনে করে বন্ড মার্কেটকে যদি ডেভলপ করতে পারি। আরো ভালো করতে পারি তাহলে সবাই বন্ড মার্কেটে যাবে। সেখান থেকে তারা টাকা তুলবে। আর ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করবে।গভর্নর আরো বলেন, আমাদের অনেক ব্যাংক টায়ার-২ বন্ড ইস্যু করছে। সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড এবং আমি জয়েন্ট করার আগ পর্যন্ত ট্রেন্ড ছিল এক ব্যাংক বন্ড ইস্যু করতে আর আরেক ব্যাংককে নিতে হতো। আমি জয়েন্ট করার পর ফিফটি করে দিয়েছি। ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড তাকে বাইরে বিক্রি করতে হবে। ব্যাংকের বন্ড তো সব সিকিউরড বন্ড। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক ফল্ট করেনি। আগামী ৫০ বছরেও ফল্ট করবে না বলে আমি মনে করি। তাহলে সব তো সিকিউরড বন্ড। তারা কেন মার্কেটে আসবে না। সেটা কেন সাধারণ লোক কিনবে না। আমার কাছে এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬টি ব্যাংক এসেছে। সবাইকে বাধ্যতামূল করে দিয়েছি যে ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড ক্যাপিটার মার্কেটে ইস্যু করতে হবে। আমরা ক্যাপিটাল মার্কেটে বন্ডগুলোকে বড় করার চেষ্টা করছি।আরেকা বিষয় হলো সরকারি যে ট্রেজারি বন্ড আছে এগুলো সেকেন্টারি মার্কেটে ট্রেড করার অটোমেটিক সিস্টেম ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়ে গেছে। মগ ট্রাইলও হয়েছে এবং এটা খুব ভালো কাজ করেছে। সুতারাং আমরা এটা খুব শিগগিরই শুরু করতে পারবো। শুধু সরকারের আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে।বন্ড মার্কেটের বিকাশে আরেকটা বড় সমস্যা ছিল সঞ্চয়পত্র উল্লেখ করে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, সঞ্চয়পত্রে খুব হাই ইন্টারেস্ট ছিল। এ কারণে বিনিয়োগের একটা বিরাট অংশ সঞ্চয়পত্রে ঢুকে যেত। এর মাধ্যমে গরিবের টাকা আমরা বড় লোকদের দিয়ে দিতাম। আমি অর্থ সচিবের দায়িত্ব নিয়ে সঞ্চয়পত্র যাতে একজন লোক ৫০ লাখের বেশি না কিনতে পারে সেই আইন করেছি। এখন কোনো ব্যাংকে ৫০ লাখের বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। আমরা চাই মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করুক।