পুঁজিবাজারের চার কোম্পানির রমরমা ব্যবসা

পুঁজিবাজারে কাগজ ও মুদ্রণ খাতের বড় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডের ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। একই সঙ্গে মাগুরা গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মনোসপুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ও পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডও ভালো মুনাফা করেছে। এছাড়া লোকসানের পরিমাণ কমিয়ে এনেছে হাক্কানি পাল্প। কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসান কমেছে।ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।কাগজ ও মুদ্রণ খাতে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায় কোম্পানিগুলো রমরমা ব্যবসা করেছে।কোম্পানিগুলো হলো- বসুন্ধরা পেপার মিলস, বাংলাদেশ মনোসপুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ও হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলিস লিমিটেড।বসুন্ধরার পেপারের তৃতীয় প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি হয়েছে ১০০৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার। এর মধ্যে দেশীয় বাজারে ৯৬৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১০৭ কোটি ৪ লাখ টাকার। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বিদেশে পণ্য বিক্রি বেড়েছে ২৮ শতাংশ ও দেশে ১৮ শতাংশ। হাজার কোটি টাকার বিক্রির মধ্যে বসুন্ধরা পেপার শুধু কাগজ পণ্য বিক্রি করেছে ৩৯০ কোটি ৮১ লাখ টাকার। টিস্যু পণ্য বিক্রি করেছে ৪২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। এ দুই ধরনের পণ্যে ১৮ ও ৩২ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে।এছাড়া ডায়াপ্যান্ট, ডায়াপার, ন্যাপকিন, বেবি ওয়াইপ, ওয়েট টিস্যু, ফেস মাস্ক ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ওয়াইপসের মতো স্বাস্থ্যকর পণ্য বিক্রি ১৮ শতাংশ কমে ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ হয়েছে। তবে, এবার এয়ার ফ্রেশনার ও টয়লেট্রিজ পণ্য বিক্রি হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি।জুলাই ২০২২ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট নয় মাসে কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৩৯ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬৫৬ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে ৫১ শতাংশ। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে মুনাফা ছিল ২৫ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৯ টাকা।এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৩, তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে আট কোটি ৮৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৪ টাকা। যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল সাত কোটি ৮২ লাখ ৬ হাজার ১৪৮ টাকা। বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় বা মুনাফা হয়েছে এক টাকা ৬৫ পয়সা। যা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ছিল এক টাকা ৫৭ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে আট পয়সা করে।চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে চার টাকা ৭৯ পয়সা। যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল দুই টাকা ৭২ পয়সা। অর্থাৎ ৭৭ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে প্রতিষ্ঠানটির।একই গ্রুপের অপর প্রতিষ্ঠান পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে এক টাকা ২৫ পয়সা করে। যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ৮৬ পয়সা।অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের একই সময়ে মুনাফা বেড়েছে ৩৯ পয়সা করে।২০২২-২৩ অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে তিন টাকা চার পয়সা। যা এর আগের বছর ছিল দুই টাকা ৯৭ পয়সা। অর্থাৎ নয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে সাত পয়সা।চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলসের ব্যবসা বেড়েছে ১৩৫ শতাংশ। ফলে তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৩ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি ২০ পয়সা লোকসান থেকে আয় ১২ পয়সা, অর্থাৎ মুনাফায় ফিরেছে প্রতিষ্ঠানটি।সবমিলিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৭০ পয়সা। সেখানে আগের বছর একই সময়ে ছিল এক টাকা ছয় পয়সা।এদিকে, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এর তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন ৯ মে পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ছয় পয়সা। এর আগের বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল এক টাকা ৯৬ পয়সা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা ভালো হওয়ায় শেয়ারপ্রতি এক টাকা ৯০ পয়সা করে লোকসান কমিয়ে এখন মুনাফার অপেক্ষায় রয়েছে।খুলনা প্রিন্টিং-এর মতো অপর প্রতিষ্ঠান সোনালী পেপার ৩১ এপ্রিলের মধ্যে চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, একটি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তার ত্রৈমাসিক আর্থিক বিবরণী ঘোষণা করার জন্য এক মাস সময় পায়। প্রতিষ্ঠানটি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেরও আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।তবে, সোনালী পেপার চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ করেছে। তাতে দেখানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে তিন টাকা চার পয়সা। যা এর আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ১৯ পয়সা।এছাড়া আরও পুঁজিবাজারে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে। তারা হলো- খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড। এ দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সোনালী পেপার ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (অক্টোবর ২০২২ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৩, ছয় মাস সময়ের) প্রকাশ করেনি। অন্যদিকে, খুলনা পেপার তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।