পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি দ্বিতীয় প্রজন্মের হাতে বাঁচে না

আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো প্রথম প্রজন্মের হাতে ভালো চললেও সেকেন্ড জেনারেশনের (দ্বিতীয় প্রজন্ম) হাতে গেলেই আর বেঁচে থাকতে পারে না বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম। গতকাল চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই) বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে এক ওয়েবিনার আয়োজন করে। ওয়েবিনারের শিরোনাম ছিল ‘পুঁজিাবাজারের প্রেক্ষিতে টেকসই অর্থায়ন ও বিনিয়োগকারীদের সহনশীলতা’। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি কমিশনার এ কথা বলেন।রুমানা ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে এখন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ খুবই কম। সবাই আজকে বিনিয়োগ করে আজকেই গেইন করতে চায়, রাতারাতি মুনাফা তুলে নিতে চায়। এ কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বিনিয়োগকারীরা। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত ঝুঁকি কম নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেনই। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, এগুলো কোনো রকম বেঁচে থাকলেও ভালো কিছু করতে পারে না। তার কারণ হচ্ছে কোম্পানিগুলোয় সুশাসনের অভাব রয়েছে। এগুলো ঠিক করতে হবে।এসডিজি এবং ইএসজি’র বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখে আমাদের ইনভেস্টর তৈরি করতে হবে । ২০২৪ সালে ইএসজি’র লক্ষ্য সামনে রেখে আমাদের তৈরি হতে হবে, কেননা ইউরোপ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের সঙ্গে কাজ করবে না, যাদের ইএসজি নেই। তাই আমাদের সাসটেনবল ফাইন্যান্স ও বিনিয়োগকারীদের সহনশীলতা নিয়ে কাজ করতে হবে। সচেতন ইনভেস্টর তৈরি করতে হবে, অনেক রকম প্রোডাক্ট নিয়ে তাদের জানাতে হবে। এটা নিয়ে সারাবছর কাজ করতে হবে।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সাইফুর রাহমান। সভাপতিত্ব করেন সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।সাইফুর রাহমান বলেন, সব বিনিয়োগকারীর উচিত আপৎকালীন ফান্ড রাখা। কারণ এ ফান্ড যদি না থাকে আর সব ফান্ড পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ফেলে, তাহলে যেকোনো জরুরি প্রয়োজন হলে ক্ষতি করে অর্থের জোগান দিতে হয়। কারণ আমরা চিন্তাভাবনা না করে সঞ্চয়ের সব টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ফেলি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ নিয়ে, সম্পদ বিক্রি করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করি। যেহেতু পুঁজিবাজার ঝুঁকির জায়গা, এজন্য আমার বক্তব্য হলোÑআপনারা সঞ্চয়ের একটা অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করুন।একটি আইটেমে বিনিয়োগ না করে দেখেশুনে গবেষণা করে বিভিন্ন আইটেমে বিনিয়োগ করুন। তবে বিনিয়োগের আগে কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদে কারা রয়েছেন, কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে কি না, এগুলোর দেখে তিনি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। সাসটেনেবল ফাইনান্সের ক্ষেত্রে প্রফিট মাক্সিমাইজেশন নিয়ে যেমন ভাবতে হবে, তেমনি লসের বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে। এই বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে ইন্টারমিডিয়ারিজ প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসইসি’র সঙ্গে এরই মধ্যে একাত্ম হয়ে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও তিনি এমন সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া বিআইসিএম, বিএসএএম এবং বিএসইসি’র ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি বিভাগও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যাচ্ছে। বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছানো হলো আমাদের সবার দায়িত্ব, যেন তারা তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোও বিবেচনা করে তাদের ইনভেস্ট করে বিনিয়োগ সুরক্ষা করতে পারে।আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সব স্টেকহোল্ডার বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আইওএসসিও’র ষষ্ঠ বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। আমরা বিনিয়োগকারীদের বিএসইসি এবং স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন আর্থিক সাক্ষরতা প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে পুঁজিবাজার সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বাড়াতে অনুরোধ করি। বিএসইসি আর্থিক সাক্ষরতা-সম্পর্কিত বিষয়গুলো সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েছে এবং বিএসইসির স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির মাধ্যমে এগুলো সারাদেশে পৌঁছে যাবে।