পুঁজিবাজারে বসে ব্যাংককে সাপোর্ট দিচ্ছি

দেশের ব্যাংকগুলো ঠিকমতো প্রভিশন না রাখায় এবং খেলাপি ঋণের কারণে এখন তারল্য সংকটে বা মূলধনের অপর্যাপ্ততার কারণে বন্ড ইস্যু করছে। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন ব্যাংকের পারপেচুয়াল বা সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া ব্যাংকগুলো আরও বিভিন্ন ধরনের বন্ড ইস্যু করে থাকে। তাই এখন পুঁজিবাজারে বসে ব্যাংক খাতকে সাপোর্ট দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। গতকাল এফবিসিসিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে ‘বন্ড মার্কেট : দ্য আল্টিমেট লং টার্ম সল্যুশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির সাবেক কমিশনার এবং শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্র কান্তি চৌধুরী, রিচার্ড ডি রোজারিও, নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী।অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত তার আমলে পুঁজিবাজারে বন্ড লেনদেন শুরু হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, আমরা এখন ক্যাপিটাল মার্কেটে বসে ব্যাংকগুলোকে বাঁচাচ্ছি পারপেচুয়াল বন্ড দিয়ে; পারপেচুয়াল বন্ডের ট্রেড শুরু হয়েছে, সিটি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলো ট্রেড শুরু করেছে।’সরকারি বন্ডের লেনদেন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ প্রথম দিনে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকার সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ড লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই বছর ধরে বন্ডের যে চেষ্টা ছিল তা আমরা এখন সফলভাবে করতে পারছি। ইতোমধ্যে প্রাণ গ্রুপ ১০০ কোটি টাকার বন্ড নিয়েছে, মেটলাইফ নিয়েছে ১০০ কোটি টাকার এবং আইএফসি ৪ বিলিয়ন ডলারের সাইজ বন্ড ইস্যু করতে দরখাস্ত করেছে। আশা করছি দেশের বন্ড মার্কেট অনেক ভালো করবে।’তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের লাভ করতে দিতে হবে। না হলে সরকারকে একটা টাকাও ট্যাক্স দিতে পারবে না। ব্যবসায়ীদেরও স্মার্ট হতে হবে। বিকল্প অর্থায়ন করতে হবে। শুধু একটি উৎসের ওপর নির্ভর করলে হবে না। ক্রয়মূল্য, উৎপাদন মূল্য, বিক্রয়মূল্য এই তিনটা দিকে সবচেয়ে বেশি ফোকাস করতে হবে।’এদিকে শিল্প খাতের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। একই সময়ে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে বন্ডকে বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন।প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, আগে ২৬ থেকে ৩০ টাকায় গ্যাস কিনে সরকার ভর্তুকি দিয়ে ক্যাপটিক পাওয়ারে জন্য ১৬ টাকায় বিক্রি করেছে। এখন গ্যাস কেনা পড়ছে ৭৫ টাকা। এমন সময় ১৬ টাকায় গ্যাস বিক্রি করা সম্ভব নয়। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসতে এ গ্যাসের দাম কত টাকা করা যায় তা নির্ধারণ করার জন্য। আমি ইতোমধ্যে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। এখন ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নেবেন গ্যাসের দাম কত টাকা করা যায়।তিনি বলেন, সরকার কত টাকায় সর্বোচ্চ ভর্তুকি দিতে পারবে আর ব্যবসায়ীরা কত টাকায় কিনতে পারবেন এ রকম একটা পর্যায়ে এনে আমরা মূল্য নির্ধারণ করতে পারলে গ্যাস সরবরাহ করতে পারব। কারণ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা এলএনজি কিনতে পারছি কিন্তু দাম বেশি পড়ছে। প্রাইসের কারণে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ গ্যাসের সংকট এটা দেশের বড় সমস্যা। ইতোমধ্যে লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে। তবে এসব সমস্যা শুধু আমাদের একার নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। এত বড় দেশ তারাও চাপে আছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সমস্যার কারণে আমাদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।তিনি বলেন, আমাদের কিছু সমস্যা আছে যেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আরও কিছু সমস্যা রয়েছে যেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যেমনÑআমাদের বন্দরে সমস্যা আছে, ট্যাক্স ভ্যাটের সমস্যা আছে, অবকাঠামোগত সমস্যা, রেগুলেটরি সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে; এগুলো আমরা ইচ্ছা করলেই সমাধান করতে পারি। এ বিষয়ে আমাদের নজর দেয়া দরকার।বন্ড মার্কেট সম্পর্কে সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের বন্ড মার্কেট বিষয়ে একদিকে প্রচারের অভাব রয়েছে, অন্যদিকে এ মার্কেটটার বিষয়ে অনেক বিজ্ঞ লোকও বোঝেন না। এই দুইটা বিষয়ে এখন জোর দিতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে শেয়ারে বিনিয়োগের চেয়ে বন্ডে বিনিয়োগ বেশি ঝুঁকিমুক্ত। এসব বন্ডে বিনিয়োগ করলে আসল টাকা খোয়া যাওয়ার কোনো ভয় নেই। সরকারি বন্ড লেনদেন চালু হয়েছে এটা আমাদের জন্য একটি নতুন মাইলফলক।