পুঁজিবাজার নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের বৈঠকে যা হলো
পুঁজিবাজারের চলমান সংকট থেকে বের হতে আজ স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।এতে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয় সবচেয়ে কম বাজার মূলধনের ১৬৯ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হলেও বাকি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠবে না।ডিএসই ও সিএসই চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি আইসিবি ও সংস্থাটির সব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএ, ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিবিএ, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদেরও বৈঠকে ডাকা হয় এতে। ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবি, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদেরও বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, ‘পুঁজিবাজারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডাকা হয়েছিল। ১৫০ জনের মতো মানুষ এসেছিলেন। সবার কাছ থেকে মতামত নেয়া হয়েছে কীভাবে ভালো করা যায়।‘তাদের পক্ষ থেকে নানা দাবি উঠেছে। কর ছাড়সহ বিভিন্ন বিষয়গুলোর ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।’গত ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতিতে অর্থনীতি নিয়ে যে উদ্বেগ, তার প্রভাব পুঁজিবাজারে স্পষ্ট। ২৮ জুলাই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পর বিএসইসি দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দিয়ে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়।এরপর মাস দুয়েক উত্থান ও ব্যাপক লেনদেন হলেও অক্টোবর থেকে আবার শুরু হয় ভাটার টান। ডিসেম্বরে দেখা দেয় লেনদেনের খরা। এক পর্যায়ে লেনদেন নেমে আসে দুই শ কোটি টাকার ঘরে। চাঙা পুঁজিবাজারে একটি কোম্পানিতেই এরচেয়ে বেশি লেনদেন দেখা গেছে।এর মধ্যে ডিসেম্বরের শেষে বিএসইসি ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর তুলে দিয়ে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ ঠিক করে দেয়। কিন্তু এতে লাভ হয়নি, উল্টো হয় বুমেরাং। কেউ কেউ মনে করতে থাকে বাকি কোম্পানিরও ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হবে এভাবে। এতে শেয়ার কেনায় আগ্রহ আরও কমে যায়।নতুন বছরের প্রথম তিন কর্মদিবস লেনদেন নেমে আসে দুই শ কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে এই বৈঠকটি ডাকা হয়।বৈঠকের দিনও পুঁজিবাজারে সূচক ১৭ পয়েন্ট এবং লেনদেন বেড়েছে এক শ কোটি টাকার মতো, তবে এখনও তা তিন শ কোটি টাকার কম।লেনদেন তলানিতে নামার কারণে আসলে ভালো নেই কোনো পক্ষ। কমিশন প্রায় শূন্যে নামায় কর্মীদের বেতন পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় ব্রোকারেজ হাউজ। ডিএসই ও সিএসই এবং সরকারের রাজস্বও যাচ্ছে কমে। যারা মার্জিন ঋণ দেয়, তাদের অবস্থাও ভালো নয়। কারণ, নতুন করে কেউ ঋণ নিতে চাইছে না, শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় আগের ঋণও পরিশোধ হচ্ছে না।এই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এমন প্রশ্নে এতে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবাইকে বাজার ভালো করতে নামতে হবে। আর যত দিন পুঁজিবাজারের স্বাস্থ্য ভালো না হলে ফ্লোর প্রাইস পুরোপুরি উঠবে না।বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলেছি দেশের পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক রোল প্লে করতে। গত দুদিন ধরে করছি। সেটা কাজে দিচ্ছে। আমরা সবাইকে নামতে বাজার ভালো করতে বলেছি। আশা করি সামনে দেশের পুঁজিবাজার ভালো হবে।‘আরেকটি বিষয় খুব স্পষ্ট করে দিয়েছি দেশের পুঁজিবাজার থেকে এখন ফ্লোর প্রাইজ উঠছে না।’