পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে: বাণজ্যিমন্ত্রী
বাণজ্যিমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেছেন, বর্তমানে শিল্প-বাণিজ্যের অর্থায়নে পুঁজিবাজারের অংশ খুবই কম। বিনিয়োগের বড় অংশ যোগান দিচ্ছে ব্যাংকিং খাত। কিন্তু ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়ন করছে বলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই উন্নীত দেশের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে হবে। এখান থেকে বিনিয়োগ চাহিদার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ যোগান দিতে হবে।বৃস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই কথা বলেছেন। রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) ভবনে এই এক্সপো শুরু হয়েছে।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।LankaBangla securites single pageএছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বাংলাদেশ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট আনিস উদ দৌলা, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন অর্থসূচক সম্পাদক জিয়াউর রহমান।প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে বেশি অর্থের যোগান করতে পারলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। ক্রাইসিসের মধ্যেও আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে, আমরা সেই আশা করি। উন্নয়নের সব ক্ষেত্রেই শিক্ষিত জাতি দরকার। বর্তমানে অনেক মানুষ গুজব ছড়ায়। তাই গুজবে মনযোগ দেওয়া ঠিক হবে না।এ সময় বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, গত ১২ বছরে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমরাও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। পুঁজিবাজার শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। একটি পূর্ণাঙ্গ বাজার গড়তে কাজ করতে চাই। এই খাতের পত্রিকাগুলো আমাদের কাজ করতে অনেক সহযোগিতা করছে। অর্থসূচক সবসময় নতুন দিকনির্দেশনা দিয়ে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের পাশে ছিলো। গুজব ছড়ানোয় অনেকে কাজ করছে। তাই জেনে শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। গুজবে কান দেওয়া যাবে না।সিএসই চেয়ারম্যান বলেন, দেশের নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা অনেক। তবে পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর উপস্থিতি একেবারে কম। পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে আসা উচিৎ। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পুঁজিবাজার থেকে আসতে হবে। এছাড়া এসডিজি অর্থায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান কমিশন আইনগত সংস্কার সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে।এদিন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো সবাইকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসছে। এতে বিনিয়োগকারী সহ সবাই উপকৃত হবেন। তিনদিন ব্যাপী এই আয়োজনে অনেককিছু জানা যায়। সবাইকে ভালো একটি স্টক মার্কেটের প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করতে হবে। বাজেট ও ইকোনমিক আকার অনেক বড় হয়েছে। বিশ্বে ব্যবসা বাণিজ্যের খারাপ প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে।বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, অর্থসূচকের এই আয়োজন সাহসী পদক্ষেপ। এতে পুঁজিবাজার ভালো হবে। এই বাজারের ইতিহাস অনেক লম্বা। তবে আমরা সেই তুলনায় এগিয়ে যেতে পারিনি। চিন্তা ভাবনা করে বিনিয়োগ করতে পারলে ঝুঁকি কমে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে হবে। সমন্বিত প্রচেষ্টা না থাকলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না।এছাড়া আনিস উদ দৌলা বলেন, করোনার পরবর্তীতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এতে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম বেড়ে যায়। সবকিছুতেই এসবের প্রভাব পড়েছে। বর্তমান কমিশন প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহ অন্যান্যদের বিনিয়োগ আকর্ষণে কাজ করছে। এছাড়া বন্ড মার্কেট নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন পদক্ষেপে এর চাহিদা বাড়ছে।ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, করোনা সহ অন্যান্য সংকট কেটে যাচ্ছে। সকল কিছু আগের মতোই স্বাভাবিক হচ্ছে। দেশের পুঁজিবারও সকল সংকট সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন। করোনার মধ্যে সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক বেশি সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। সাপ্লাই চেইন ঠিক হয়েছে। কৃষি খাতেও উৎপাদন বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে রপ্তানির পরিমাণ। এভাবে অন্যান্য খাতের মতো দেশের পুঁজিবাজারও এগিয়ে যাবে।এদিন জিয়াউর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের সচেতন বাড়াতে আমরা এই এক্সপো শুরু করেছিলাম। ২০১০ সালের ধসের পর বাজারের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। তাদের সেই চিন্তাভাবনা দূর করতে এই আয়োজন করা হয়। বর্তমানে অনেকে গুজব ছড়ায়। এতে কান দেওয়া উচিৎ না। একটু ধাক্কা খেলেও বাংলাদেশ সব সংকট কাটিয়ে ভালো দিকে যাচ্ছে। তাই কোনো গুজবে কান দেওয়া উচিত না।আগামী শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় এক্সপোর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।এবারের এক্সপোতে সিডিবিএল, বিআইসিএম, বিএএসএম, ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, লিস্টেড কো্ম্পানি, সম্পাদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানসহ ৩৪টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। তিনদিনের এক্সপোতে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ের উপর চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।এসব সেমিনারে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তা, খ্যাতনামা স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অ্যাসেট ম্যানেজার, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট প্রমুখ অংশ নিয়েছেন।ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো সকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে। এক্সপোতে প্রবেশের জন্য কোনো টিকিট লাগবে না। উল্টো প্রবেশ কূপনের র্যাফেল ড্রতে থাকবে মূল্যবান সব পুরস্কার।