পতনের চেয়ে উত্থান ৭গুন

বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। বেড়েছে বাজারে মূলধন পরিমাণ। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের তুলনায় উত্থান ৭গুন বেশি। তবে গেল সপ্তায় লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। সপ্তাহটিতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। মোট লেনদেনের ২১ শতাংশই টপটেন বা দশ কোম্পানির দখলে রয়েছে।স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা।। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫২৯ কোটি ৪ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৯৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।গেল সপ্তায় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৮৬৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৭৭৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৬২টির, দর কমেছে ২৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৮টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ১০টি কোম্পানির শেয়ার।সপ্তাহে সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ৩৯ দশমিক ২৩ পয়েন্ট কেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩১৯ দশমিক ২৫ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৫ দশমিক ২৪ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ১৮৭ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৭২ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে।এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ২৯ পয়েন্ট ছিল। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।গেল সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৭০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। বি ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ এবং এ ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। মোট লেনদেনের ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ লেনদেন করেছে।এছাড়া জেমিনি সী ফুডের ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, নাভানা ফার্মার ২ দশমিক ২৪ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ২ দশমিক ২২ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের (এন ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রুপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, সোনারী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, পেপার প্রসেসিংয়ের (বি ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং খান ব্রাদার্সের (বি ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৫৯ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির শেয়ার বি ও জেড ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা বি-ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো এন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।