পতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা, সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়ার পরামর্শ

Date: 2022-11-20 04:00:18
পতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা, সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়ার পরামর্শ
দেশের শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তকে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ সাধুবাদ জানালেও আছে সমালোচনাও। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আলোচনা সমালোচনার উর্ধ্বে থাকবে বাজারের স্বাভাবিক পরিস্থিতি। যদিও গত সপ্তাহে বড় পতনেই লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। আজ (রোববার) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেও বড় পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার তাগিদ দিয়েছে বিশ্লেষকরা।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের শেয়ারবাজারে একাধিক সময় বিভিন্ন ইস্যুতে পতন হয়েছে। এর মধ্যে গুজব অন্যতম। এছাড়াও চেক নগদায়ন ইস্যুতেও সম্প্রতি শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু সিদ্ধান্তেও অস্থিরতা ছিল। তবে নতুন গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ারবাজারবান্ধব সিদ্ধান্তও লক্ষ্য করা গেছে।জানা গেছে, শেয়ারবাজারে পতনের অন্যতম কারণ গুজব। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। অথচ কখনো কখনো দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কারণেও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়েছে।daraz-300x300ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, চলতি বছরের ২৮ জুলাই ৫৭ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। একই দিন শেয়ারবাজারে স্বস্তি ফেরাতে পুনরায় ফ্লোর প্রাইস চালুর সিদ্ধান্ত জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস চালুর খবরে ৩১ জুলাই দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মনে স্বস্তি ফেরায় সেদিন ‘ডিএসই এক্স’ এক দিনেই ১৫৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। একইসঙ্গে ফ্লোর প্রাইসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও এক সপ্তাহে লেনদেনও বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।Nogod-22-10-2022তবে কিছুদিন পরই ফ্লোর প্রাইস নিয়ে স্বস্তি আর টেকেনি। একটি পক্ষ ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেওয়ার গুজব ছড়ালে পতন হয় শেয়ারবাজারে। গত ১১ আগস্ট ফ্লোর প্রাইস নিয়ে গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘোষণা দেয় বিএসইসি।সাময়িক স্বস্তি থাকলেও কিছুদিন পরই বেশিরভাগ শেয়ারের দর ফ্লোর প্রাইসে নেমে যায়। এখন পর্যন্ত আড়াই শ’ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এমন অবস্থায় ফ্লোর প্রাইসের সমালোচনাও করছেন অনেকে। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ এখনো ফ্লোর প্রাইস অব্যাহত রাখার পক্ষে। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জোর করে কোন শেয়ারের দরপতন ঠেকানো উচিৎ নয়।এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে চেক নগদায়ন ইস্যুতেও অস্বস্তি তৈরী হয়েছিল শেয়ারবাজারে। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেশ কিছু শর্তে চেক নগদায়ন ছাড়াই শেয়ার ক্রয়ের সুবিধা অব্যাহত রাখে।শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে হয়তো সাময়িক স্বস্তি ছিল। তবে এ ফ্লোর প্রাইসের কারণে কারসাজি চক্রের সুবিধা হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকে ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না।তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে ইপিএস খারাপ হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিনিয়োগকারীরা ছাড়তে পারছে না। তারা এ শেয়ারগুলো বিক্রি করতে পারলেই তো অন্য শেয়ার কিনবে। কোম্পানির আয় নেই, কিন্তু শেয়ারের দাম কমতে দিবে না, বিষয়গুলো সাংঘর্ষিক।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মিজানুর রহমান মনে করেন গুজবের কারণে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারই যদি ঠিক না থাকে তাহলে বিনিয়োগ আসবে কিভাবে। বাজার ঠিক রাখতে হলে গুজবকারীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় গুজব ছড়িয়ে একটি পক্ষ লাভবান হয়েছে, আর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যারা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের উচিৎ কোন তথ্য যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস না করা, আতঙ্কিত না হওয়া। তাহলেই বাজার অনেকটা স্বাভাবিক থাকবে।তিনি বলেন, আমাদের জিডিপি ভালো, শ্রীলঙ্কা হওয়ার সম্ভাবনা কখনোই নেই। অথচ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে এমন গুজব ছড়িয়েও দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছিল। ফলে শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ভুয়া তথ্য দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করানো হচ্ছে। অথচ এখন ব্যাংকের অর্থের প্রয়োজন। এসব গুজবে পতন হচ্ছে।অধ্যাপক মিজানুর রহমান মনে করেন, গুজবকারীদের বিরুদ্ধে শুধু বার্তা দিলেই হবে না, বরং তাদের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।এছাড়াও বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইসিবিকে (ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) শেয়ার কেনা অব্যাহত রাখার পরামর্শও দেন তিনি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ব অন্যান্য ব্যাংকও শেয়ারবাজার থেকে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় করলে বাজার ভালো থাকবে বলে মনে করেন এই শেয়ারবাজার বিশ্লেষক।বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী অর্থসংবাদকে বলেন, শেয়ারবাজারে এখন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। ফলে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, বাজারকে বিভক্ত করা যাবে না। মূল মার্কেট ও এসএমই মার্কেট নামে দুই বাজার কেন থাকবে। যাদের নিজস্ব মূলধন ৫০ কোটি টাকার বেশি, ওইসব কোম্পানিকেই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। এসএমই মার্কেট নামে কোন বাজার থাকতে পারবে না।তিনি আরও বলেন, যেসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বুঝিয়ে দিয়ে তাদের বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করতে হবে।

Share this news