পরিচালন মুনাফার পর নিট মুনাফাতেও ব্যাংক খাতে চমক

দেশের ব্যাংক খাত পরিচালন মুনাফার পর নিট মুনাফার ক্ষেত্রেও চমক দেখিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালে অধিকাংশ ব্যাংকেরই নিট মুনাফা বেড়েছে।প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে ব্যাংক খাতে নিট মুনাফা ছাড়িয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালে নিট মুনাফায় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১৮৩ শতাংশের বেশি। আগের বছর নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ শতাংশের কম।খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভিশন সংরক্ষণ ও কর-পরবর্তী মুনাফাই হলো ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা। ব্যাংকের নিট মুনাফা বাড়লে শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীরা বেশি হারে ডিভিডেন্ড পান। আবার সরকারও বেশি রাজস্ব পায়। ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ তহবিল বাড়ানোর প্রক্রিয়াও সহজ হয়।সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, গত বছর রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের নিট মুনাফায়। কারণ নিয়মিত করা এসব ঋণের বিপরীতে সংরক্ষিত করা প্রভিশনের অর্থ আয় খাতে স্থানান্তর করতে পেরেছে ব্যাংকগুলো। সেই সঙ্গে অনাদায়ী কিস্তির সুদও গত বছর আয় খাতে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এছাড়া বেসরকারি খাতের ঋণের গতি আসায় নিয়মিত ঋণের সুদ আয়ও বেড়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে বেড়েছে কমিশন আয়ও। সব মিলিয়ে গত বছর পরিচালন মুনাফায় বড় উল্লস্ফন হয় ব্যাংক খাতে। আর চূড়ান্ত হিসাবে নিট মুনাফায় আরও বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি ঘটে।বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন-২০২২’ প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় ব্যাংকের নিট মুনাফার চিত্র। তাতে দেখা যায়, ২০২১ সালে ব্যাংকগুলো ২৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করে, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১০.১৭ শতাংশ বেশি।অন্যদিকে গত বছর ব্যাংকগুলো পরিচালন মুনাফা অর্জন করে ৩৪ হাজার ২২২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ২১.৩৩ শতাংশ বেশি। এই পরিচালন মুনাফা থেকে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ ও সরকারকে কর দেওয়ার পর গত বছর নিট মুনাফা হয় ১৪ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনার বছর ২০২০ সালে ২৫ হাজার ৬০১ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করে ব্যাংক খাত। আর চূড়ান্ত হিসাবে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা হয় ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। এটি তার আগের বছরের চেয়ে ৩৩.২০ শতাংশ কম ছিল। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলো ৬ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার নিট মুনাফা অর্জন করে। তার আগের বছর ২০১৮ সালে নিট মুনাফা হয় তিন হাজার ৫৯০ কোটি টাকা।প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর ব্যাংকগুলোর সুদ আয় বেড়েছে। ২০২১ সালে ব্যাংকগুলোর সুদ আয় ছিল ৮৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা, যা গত বছর বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ৫৪০ কোটি টাকায়। গত বছর সুদবহির্ভূত আয়ও বেড়েছে। ২০২১ সালে ব্যাংকগুলোর সুদবহির্ভূত আয় ছিল ৪০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালে বেড়ে হয় ৪৬ হাজার ৮২০ কোটি টাকা।প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে পুনঃতফসিল হয় রেকর্ড ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এর আগে ২০১৯ সালে পুনঃতফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। তবে এর পরের বছর ২০২০ সালে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকায়। আর ২০২১ সালে সেটি বেড়ে হয় ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হওয়ায় গত বছর ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়েছে কম। ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন প্রায় সাড়ে ৪২ শতাংশ কমে হয় ৮ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ১৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ০.২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।