পরিচালকের শেয়ার আত্মসাতের চেষ্টা, বিএসইসিকে তদন্তের অনুরোধ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এসএসই বোর্ডে কোম্পানি মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোটেকের প্রয়াত পরিচালক রফিকুল আলমের মালিকানার শেয়ার আত্মসাৎ করার চেষ্টা চলছে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ এসেছে। ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ নামে একটি ব্রোকারেজ হাউস গত বৃহস্পতিবার বিএসইসিতে এ বিষয়ে অভিযোগ করে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছে। বিএসইসিকে দেওয়া চিঠিতে অভিযোগকারী ফার্স্ট ক্যাপিটাল সার্ভিসেসের প্রধান নির্বাহী কাউসার আল মামুন জানিয়েছেন, মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোটেক নামে কোম্পানির পরিচালক রফিকুল আলমের নামে বরাদ্দ প্রায় ৯ কোটি টাকা বাজারমূল্যের সাড়ে ৭০ লাখ শেয়ার কেউ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে বলে সন্দেহ তাঁর।অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, গত ৫ মার্চ উম্মে হাবিবা ইয়াছমিন নামে পাসপোর্ট ও ব্যাংকের চেকের একটি কপি জমা দিয়ে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজে একটি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ওই দিনই তাঁর অ্যাকাউন্টে মাস্টার ফিডের ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার জমা হয়। গত ৪ মে থেকে ২৩ মের মধ্যে সেখান থেকে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০৮টি শেয়ার ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়। এর পর প্রাপ্য অর্থ থেকে গত ১১ মে ২৩ লাখ টাকা, ১৪ মে ৩৩ লাখ, ১৬ মে ৩০ লাখ ও ১৭ মে ৩২ লাখ টাকা, অর্থাৎ চার দিনে মোট ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা তোলা হয়।গত ১৮ মে পুনরায় ৫৬ লাখ টাকা তুলতে চাওয়ায় অতি অল্প সময়ে বড় অঙ্কের অর্থ উত্তোলন নিয়ে সন্দেহ হয় ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহীর। তিনি উম্মে হাবিবার বিও অ্যাকাউন্টে দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করলে জানতে পারেন, নম্বরটি উম্মে হাবিবার নয়, তার বোন ইভা আকতারের। এ সময় অবৈধ অর্থ লেনদেন দেখভালে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ক্যামেলকো) হিসেবে প্রধান নির্বাহী উম্মে হাবিবার বিও অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাইয়ে দেখতে পান, বিও অ্যাকাউন্টে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মাস্টার ফিডের কোম্পানি সচিব আবুল বাশার। আবার উম্মে হাবিবার শতভাগ উত্তরাধিকারী (নমিনি) মাস্টার ফিডেরই একজন কর্মচারী। এ অবস্থায় ওই অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেন।কাউসার আল মামুন অভিযোগপত্রে জানান, এ বিষয়ে অধিকতর তথ্য অনুসন্ধানের জন্য বিও হিসাবধারী উম্মে হাবিবাকে সশরীর ব্রোকারেজ হাউসে উপস্থিত করে যাচাই করার উদ্যোগ নেন। এ পর্যায়ে গত ২১ মে মাস্টার ফিডের কোম্পানি সচিব সুমন রাতুল পরিচয়ে ফোন করে এ অবস্থায় উম্মে হাবিবা পায়ে ব্যথা পেয়েছেন মর্মে তথ্য দিয়ে গ্রাহককে ছাড়াই সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করেন এবং উম্মে হাবিবার পক্ষে আদালতের উত্তরাধিকারনামা (সাকসেশন সার্টিফিকেট) প্রদান করেন। এতে সন্দেহ আরও বাড়লে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ থেকে এক কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে মাস্টার ফিডের আইপিও প্রসপেক্টাস থেকে পাওয়া প্রয়াত পরিচালক রফিকুল আলমের তিনটি ঠিকানায় তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনো ঠিকানাতেই রফিকুল আলম নামে কেউ ছিলেন না বলে বাড়িগুলোর মালিকরা নিশ্চিত করেন।অভিযোগপত্রে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের সিইও আরও লিখেছেন, উম্মে হাবিবাকে প্রশ্ন করে জানা যায়, সাউথইস্ট ব্যাংকে তিনি কখন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তা জানেন না। তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখন পর্যন্ত কত টাকা জমা হয়েছে, তাও জানেন না। এমনকি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আবুল বাশারকে চেনেন না। গত ১৬ জুলাই মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবির হোসেন চার থেকে পাঁচজনসহ আপাদমস্তক ঢাকা এক নারীকে নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে আসেন। ওই নারীকে উম্মে হাবিবা দাবি করে তাঁর এনআইডির সঙ্গে পরিচয় যাচাই করতে বলেন। এ নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন করতে চাইলে কবির হোসেন ক্ষেপে যান এবং হুমকি দিয়ে বের হয়ে যান।