প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাধারনদের মতো আচরন করে

: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, আমাদের শেয়ারবাজারে ২০% এর কম প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। এই সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ইলিজিবল কোটা বাড়িয়েছি। কিন্তু বাড়ানোর পরেও এরা সাধারন বিনিয়োগকারীদের মতো আচরন করে। এখানে যাতে জবাবদিহিতা তৈরী হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে আরও সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু লাভ হলেই একসঙ্গে সব বিক্রি করে দেওয়া হলেতো সেইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী গড়ে উঠবে না।শনিবার সকাল ১০টায়, ঢাকার হোটেল ওয়েষ্টিনে যৌথভাবে সিএমজেএফ ও বিএমবিএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন। এছাড়াও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ), আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।খায়রুল হোসেন বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে অনেকগুলো দূর্বলতা আছে। সেগুলো আমাদের জন্য শক্তি। আমাদের জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধন অনেক কম, শিল্পায়নে ব্যাংকের তুলনায় শেয়ারবাজার থেকে অর্থায়ন কম, ফরেন ইনভেস্টমেন্ট কম, পিই রেশিও কম, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অংশগ্রহন কম। এগুলো নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। যাতে এইসব দূর্বলতা কিন্তু আমাদের জন্য শক্তিও।একটি শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ১০-১২টি বিষয়ের দরকার আছে উল্লেখ করে খায়রুল হোসেন বলেন, এরমধ্যে ১টি হল আইন ও বিধিবিধানের উপস্থিতি। এগুলো আমাদের আছে। এছাড়া সরকারের সহযোগিতা আছে। তাদের সহযোগিতায় আইনকানুন প্রণয়ন, বিনিয়োগকারীদের প্রটেকশন, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল, ট্রাইবুন্যাল, ডিমিউচ্যুয়ালইজেশন ইত্যাদি করা হয়েছে।ভালো কোম্পানির শেয়ারবাজারে না আসার পেছনে অনেকগুলো কারন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে সচেতনতা তৈরী করতে হবে। কারন এই বাজারে গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে তারা মনে করে। ঋণ করে পরিশোধ করতে হলেও এখানে তা করতে হয় না। শেয়ারবাজারে আসার পেছনে আরেকটি অন্যতম কারন হিসেবে রয়েছে ব্যাংক থেকে সহজেই দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন। এছাড়া তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হার ব্যবধান বাড়ানো দরকার হলেও এবার তা কমানো হয়েছে।তিনি বলেন, নিজের ক্যাপিটালের সুরক্ষা বিনিয়োগকারীকেই দিতে হবে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীকে সুরক্ষায় সব আইনেই বলা হয়েছে। কিন্তু নিজের সুরক্ষা, নিজেকেই দিতে হবে।তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোথাও কমিশন আইপিওর দর নির্ধারন করে না। এগুলোর সঙ্গে জড়িত ইস্যুয়ার, মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এখন কেউ যদি ফাইন্যান্সিয়াল কারসাজি করে, তা প্রতিরোধে এফআরসি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিরীক্ষকও দায়ভার এড়াতে পারে না।শেয়ারবাজারের উন্নয়নে রেগুলেটরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় দরকার বলে জানান বিএসইসির এই সাবেক চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, আইডিআরএ, বিটিআরসি, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ যেসমস্ত প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়, সেসব নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এর কারন হিসেবে তিনি বলেন, একবার বিটিআরসির সঙ্গে গ্রামীণফোনের দ্বন্ধ হয়। এতে করে শেয়ারটিতে ব্যাপক পতন হয়। যা বাজারে পতনের সৃষ্টি করে। এছাড়া তিতাসের গ্যাসের দর নিয়েও সমস্যা হয়।দেশে প্রথমবার ২০২০ সালে ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার কারন হিসেবে তিনি বলেন, ওই বছরের শুরুতে অনাকাঙ্খিত করোনার কারনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মতিক্রমে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়। কারন ওই সময় দেশে যেদিন করোনায় প্রথম করোনায় একজন মারা যায়, তারপরে একদিনেই প্রায় আড়াইশ পয়েন্ট কমে যায়।আইপিওর শেয়ার দর নিয়ে খায়রুল হোসেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এমনকি ভারতে আপনারা ৪০% আইপিওর শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে দেথতে পাবেন। বাংলাদেশে এই মুহুর্তে ১০% এর বেশি শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে পাবেন না। তারপরেও যে পরিমাণ আছে, সেগেুলো নিরীক্ষক সার্টিফাইড করে দিয়েছে। তারপরেও বিশ্বের সবদেশের তুলনায় বাংলাদেশে ননকমপ্লায়েন্স কোম্পানির সংখ্যা কম আছে বলে মনে করেন তিনি।