পোশাক খাতে আয় কমেছে ৫ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রাণ তৈরি পোশাক খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও বাস্তবে আয় কমেছে। কয়েক মাস ধরে পরিমাণে রপ্তানি বেড়েছে। গত জুন মাসে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.২৭ শতাংশ।সর্বশেষ পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, জুলাই মাসে পোশাকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭.৪৩ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ৫১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) এই অঙ্ক ৫ হাজার ৬৫৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। শতাংশের হিসাবে ৪.২২ শতাংশ।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) থেকে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার। এর আগের প্রান্তিকে যা ছিল ১ হাজার ২২৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসের ব্যবধানে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ৫১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার বা ৪.২২ শতাংশ। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাকের একটি ধরন ওভেন থেকে আয় হয়েছে ৫১৩ কোটি ৮৪ লাখ এবং অপর বৃহৎ ধরন নিটওয়্যার থেকে আয় হয়েছে ৬৬০ কোটি ডলার।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন মাসে আরএমজি খাতে মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২৬৯ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। সেখানে আয় হয়েছে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৫ কোটি ২২ লাখ ডলার বা ৭.৫৫ শতাংশ কম।জানা গেছে, এপ্রিল-জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, কানাডা ও বেলজিয়াম ছিল বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য। এই ৯টি দেশ থেকে বাংলাদেশ ৮৩২ কোটি ৯১ লাখ ডলার আয় করেছে আরএমজি খাত থেকে। হিসাব অনুযায়ী যা মোট আরএমজি রপ্তানির প্রায় ৭১ শতাংশ।বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় একটি খাত। এর প্রধান ক্রেতা পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু করোনার পরেই সেখানে অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, যা ক্রয়ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে একটু হলেও তা পড়ছে।’রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক দুর্বল আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় এসেছে। গত বছর মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। এর আগের বছরের (২০২১-২২) তুলনায় ৬.৬৭ শতাংশ বেশি।তবে বিদায়ী অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এই সময় পোশাক রপ্তানির আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি ১০.২৭ শতাংশ। কেননা, আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানির আয় ছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি ৩১ লাখ ডলার।বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী পরিচালক মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘পুরো বছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে একটা প্রান্তিকে কিছুটা কমেছে। এটা সামনে আরও বাড়তে পারে। এটা একটা সুখবর বলা যেতে পারে। তখন আয় বেড়ে যাবে।’