অন্ধকারে নিমজ্জিত জুট স্পিনার্স : প্রতারণা করতে গেম্বলারদের ফাঁদ
![অন্ধকারে নিমজ্জিত জুট স্পিনার্স : প্রতারণা করতে গেম্বলারদের ফাঁদ](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/3681/Jute-spinners.jpg)
নানা সমস্যায় জর্জরিত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জুট স্পিনার্স পুরো ভেঙ্গে পড়েছে। কোম্পানিটির বিদ্যমান সমস্যা কাটিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যে কোম্পানিটির ভবিষ্যতে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখা নিয়ে খুবই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক। তারপরেও ধংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এ কোম্পানিটির শেয়ার দর অনেক মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির থেকে বেশি। যেখানে দক্ষ ও শিক্ষিত নামের অদক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগও কম না।দেখা গেছে, জুট স্পিনার্সের ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এতে করে পূঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। যে কোম্পানির চলতি দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা।ব্যবসায় দূরবস্থা ছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষ, দায় পরিশোধে অক্ষমতা, আর্থিক রেশিওগুলোর বাজে অবস্থা, দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ প্রদান না করা, নতুন পণ্য চালুতে অর্থায়ন করার অক্ষমতা, উৎপাদন সমস্যা, ঋণের শর্ত পূরণে অক্ষমতা, গ্রাহক চাহিদা কমে যাওয়া,জনবলের অভাব, নিয়মিত ঋণাত্মক সম্পদ বৃদ্ধি, প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজ অকেজো হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় রয়েছে জুট স্পিনার্স।এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক।এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ৪ বছর ধরে একই মজুদ পণ্য ২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দেখিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে তারা ওই মজুদ পণ্যের প্রকৃত মূল্যের পরিবর্তে ক্রয় মূল্যকে সম্পদ হিসেবে দেখিয়ে আসছে। তবে মজুদ পণ্যের মূল্য সম্পর্কিত তথ্যের অভাবে নিরীক্ষকও সঠিক দর নির্ধারন করতে পারেনি। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মজুদ পণ্যের সংখ্যা, মান ও দর নিয়ে কোন তথ্য সরবরাহ করেনি। এছাড়া সরেজমিন পরিদর্শনে মজুদ পণ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তারপরেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সঞ্চিতি গঠন করেনি। এর মাধ্যমে লোকসানের পরিমাণ কম দেখানো হয়েছে।আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩৬ অনুযায়ি, প্রতি অর্থবছর শেষে কোম্পানির সম্পদ মূল্যায়ন শেষে ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করা বাধ্যতামূলক (যদি থাকে)। এরকম ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করার মতো ইন্ডিকেশন জুট স্পিনার্সে রয়েছে। কারন কোম্পানিটির বিগত ৫ বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় আর্থিক হিসাবের সঙ্গে সম্পদের প্রকৃত বাজার দর পার্থক্য হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাসত্ত্বেও ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করেনি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।কোম্পানিটির জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছ থেকে ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে চুক্তি হয়নি।কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে অগ্রিম হিসাবে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ও গ্রাহকের কাছে পাওনা হিসাবে ৩ লাখ টাকা দেখিয়েছে আসছে। কিন্তু কোন ধরনের সমন্বয় করছে না। ওই হিসাবের সত্যতার বা আদায়ের সম্ভাব্যতার বিপরীতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে কোন প্রমাণাদিও দিচ্ছে না। যেখানে লোকসান নিশ্চিত হলেও কোন ধরনের সঞ্চিতি গঠন করা হচ্ছে না।অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে পণ্য ক্রয়বাবদ ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার ও বিক্রির আগেই অগ্রিম হিসাবে ৭৫ হাজার টাকার দায় রয়েছে। কিন্তু এই হিসাবও সমন্বয় করা হয় না দীর্ঘদিন ধরে। এক্ষেত্রেও সত্যতা নিয়ে কোন প্রমাণাদি নিরীক্ষককে দেয়নি জুট স্পিনার্স কর্তৃপক্ষ।জুট স্পিনার্স কর্তৃপক্ষ ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকার সুদজনিত ব্যয়ের মধ্যে ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সঞ্চিতি বছরের পর বছর ধরে দেখিয়েছে আসছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই অবরুদ্ধ সুদের বিষয়ে কোন আপডেট তথ্য নিরীক্ষককে সরবরাহ করেনি। যা এখনো পূণ:তফসিল করা হয়নি।জুট স্পিনার্স কর্তৃপক্ষ কোম্পানি আইন ও ইনকাম টেক্স অধ্যাদেশ ভঙ্গ করে পরিচালকদের সঙ্গে অধিকাংশ লেনদেন নগদে করে থাকে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।এ কোম্পানিটিতে শ্রম আইন অনুযায়ি গঠিত ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ফান্ড রয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা বিতরন করেনি। যা শ্রম আইনের ব্যত্যয়।ধংসের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের জুট স্পিনার্সের শেয়ার দর বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩২২.৭০ টাকায়। এমন একটি কোম্পানিতেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩.২০ শতাংশ। অথচ তাদেরকে শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেন। তাদের মতে, এরাও সাধারন বিনিয়োগকারীদের মতো পচাঁ শেয়ারে লোভের বশবর্তী হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।