অবণ্টিত লভ্যাংশ সিএমএসএফে পাঠায়নি প্রাইম টেক্সটাইল

Date: 2024-09-29 09:00:06
অবণ্টিত লভ্যাংশ সিএমএসএফে পাঠায়নি প্রাইম টেক্সটাইল
বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যবসায় ভালো করতে পারছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস লিমিটেড। ১৯৯৫ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানিটির মোট মালিকানার অর্ধেক রয়েছে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে।টানা চার বছর এসব বিনিয়োগকারীর নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের ক্যাটাগরি বাঁচিয়ে রাখলেও ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ায় কোম্পানিটিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানা অনিয়মে জড়িয়ে কোম্পানিটিকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে বলেও অভিযোগ তুলেছে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী। এবার কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত নিরীক্ষক জানিয়েছে, তাদের যথাযথ তথ্য দিয়ে নিরীক্ষার কাজে সহায়তা করেনি লোকসানী এ কোম্পানিটি। ফলে নিরীক্ষক কোম্পানির প্রকৃত সম্পদ ও ঋণের পরিমাণসহ বিভিন্ন তথ্য নিশ্চিত হতে পারেনি। নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ক্রয় বিল ও ব্যয়ের তালিকা না থাকায় প্রাইম টেক্সটাইলের ২০২২-২৩ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত কাঁচামাল, বিক্রিযোগ্য পণ্য এবং উৎপাদনে প্রক্রিয়াধীন থাকা পণ্যের মূল্য যাচাই করতে পারেনি তারা। এ ছাড়া আলোচিত হিসাব বছরে নিরীক্ষার জন্য কোম্পানিটিতে দেরিতে নিয়োগ পাওয়ায় তারা মজুত পণ্যের অস্তিত্ব ছিল কি না, তাও নিশ্চিত হতে পারেনি। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ স্থায়ী সম্পদ নিয়ে ক্রয় মূল্য, অবচয় হার, অবচয় শেষে মূল্য (রিটেইন ডাউন ভ্যালু) ইত্যাদি বিষয়েও তথ্য দিয়ে নিরীক্ষককে সহায়তা করেনি। ফলে নিরীক্ষক প্রাইম টেক্সটাইলের আর্থিক হিসাবে যত টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখানো হয়েছে, তার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি।নিরীক্ষক আরও জানিয়েছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের ইডিএফ লোন, ডিএফসি ডিপোজিট, ইডিএফ ও বিবিধ হিসাবের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেয়নি। ফলে তারা ঋণের সর্বশেষ পরিমাণ ও সুদজনিত ব্যয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। এ ছাড়া কোম্পানির পরিচালকরা আইন বহির্ভূতভাবে সাধারণ সভার কোনো অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে সম্মানীর নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এর বাইরে বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘ বছরের অবণ্টিত লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যারিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) স্থানান্তর করেনি কোম্পানিটি। শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য এ লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। যার মেয়াদ ২০২২-২৩ হিসাব বছর পর্যন্ত ৩ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে।বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত প্রাইম টেক্সটাইল ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা নিট লোকসান করেছে। আলোচিত বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮ টাকা ৫ পয়সা। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয়ও (রিটেইন আর্নিংস) ধনাত্মক থেকে ঋণাত্মক হয়ে গেছে। বছর শেষে কোম্পানিটির এই আয় দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। এদিকে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কাঁচামাল সংকটে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে নিট লোকসান ও ঋণাত্মক রিটেইন আনিংসের বোঝা আরও বড় হতে পারে।১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রাইম টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা রয়েছে ৩ কোটি ৮২ লাখ। এরমধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে থাকা মালিকানার অংশ ৫০ শতাংশ। বাকি ৫০ শতাংশের মালিকানায় রয়েছে পুঁজিবারের বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারী। গত বৃহস্পতিবার এক দিনেই ৭ শতাংশ দর কমে লেনদেন শেষে শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ১০ পয়সায়।

Share this news