নয় মাসের ২.৭৫ টাকার ইপিএস কিভাবে ১২ মাসে ৯৯ পয়সা ঋণাত্মক হয়?

একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির (বে লিজিং) ৯ মাসের ২.৭৫ টাকা শেয়ারপ্রতি মুনাফা ১২ মাসে ৯৯ পয়সা নেগেটিভ (ঋণাত্মক) হওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। যারা এরসঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা। একইসঙ্গে গত ২ মাসে ১টি কোম্পানির ৪৫৭% দর বৃদ্ধি স্বাভাবিক না বলেও জানান তারা।শনিবার সকাল ১০টায়, ঢাকার হোটেল ওয়েষ্টিনে যৌথভাবে সিএমজেএফ ও বিএমবিএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান। এতে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএ’র নেতা মনিরুজ্জামান।অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, অধ্যাপক খায়রুল হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, এএএমসিএমএফ, আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আল-আমিন বলেন, একটি কোম্পানির নয় মাসে ইপিএস ছিল ২.৭৫ টাকা। যা ভালো ব্যবসা এবং বিনিয়োগযোগ্য। কিন্তু ১ বছরের ব্যবসায় কোম্পানিটি ইপিএস দেখালো ৯৯ পয়সা নেগেটিভ। এখন যেসব বিনিয়োগকারী ৯ মাসে ২.৭৫ টাকা দেখে বিনিয়োগ করল, তাকে কি এখানে দোষ দেওয়া যাবে। সেতো ঠিকই ফান্ডামেন্টাল দেখে বিনিয়োগ করেছিল। এ ধরনের অ্যাকাউন্টস যারা প্রকাশ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।তিনি বলেন, এসএমইতে ৫ টাকার শেয়ার ৫০ টাকা হয়ে গেল। এরমধ্যে রয়েছে বন্ধ কোম্পানি। এখন বন্ধ কোম্পানির শেয়ার এভাবে কারা বৃদ্ধি করল। এই অস্বাভাবিকতারোধে এসএমইতে লেনদেনযোগ্য করতে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা করার আহ্বান করেন তিনি।তিনি আরও বলেন, গত ২ মাসে ১টি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ল ৪৫৭%। এটা কি বাজার সাপোর্ট করে? এটা কি স্বাভাবিক? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে এই দর বৃদ্ধিতে কারা ভূমিকা রাখল, তাদের খুজে বের করতে হবে। কারন এমন অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির শেয়ারেই পরবর্তীতে সাধারন বিনিয়োগকারীরা আটকে যায়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল বলেন, আমাদের শেয়ারবাজার ফ্লোর দিতে হয়েছে। অর্থাৎ সাপ্লাইয়ের সঙ্গে ডিমান্ডের ঠিক নাই। তাই ডিমান্ড বাড়াতে হবে। তবে সাপ্লাইয়ের (আইপিও) দরকার আছে। আইপিও ছাড়া সেকেন্ডারি মার্কেট ক্ষতিগ্রস্থ হবে।তিনি বলেন, রোড শো বিএসইসির কাজ না। তারপরেও তারা করছে। কিন্তু বিএসইসির নিজের যে কাজ, সেখানেই অনেক গ্যাপ রয়েছে।ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জনাব রিচার্ড ডি-রোজারিও বলেন, সবারই শেয়ারবাজারে জড়িত হওয়া উচিত। সেটা যারা বুঝে বা না বুঝে। যারা বুঝে, তারা নিজেরাই পোর্টফোলিও ম্যানেজ করবে। আর যারা বুঝে না, তারা অ্যাসেট ম্যানেজারদের মাধ্যমে বিনিয়োগ করবে।তিনি বলেন, গ্রুপ কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে সিস্টার কনসার্নগুলো সুবিধা নিচ্ছে। যেগুলোতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিনাসুদে অর্থ সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ ওই তালিকাভুক্ত কোম্পানি নিজে ঋণে জর্জরিত। এছাড়া বিভিন্নভাবে সুবিধা দেওয়া হয়। এগুলো বন্ধ করা উচিত।