নতুন সুযোগের অপেক্ষায় বিনিয়োগকারীরা
![নতুন সুযোগের অপেক্ষায় বিনিয়োগকারীরা](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/5851/sharebiz_bazar.jpg)
দেশের পুঁজিবাজারে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে লেনদেন কমে ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। এরপর থেকে সূচক ও লেনদেন ধারাবাহিকভাবে কমার মাধ্যমে লেনদেন ২০০ কোটি টাকার ঘরে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করে। তুলে নেয়া ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস পুনরায় বহাল রাখলে চলতি সপ্তাহে সূচক ও লেনদেন বাড়তে শুরু করে। এতে দুই-তিন কার্যদিবসে লেনদেন ৭০০ কোটি টাকার ঘর ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধির সেই প্রভাব ধরে রাখতে পারেনি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ফলে সপ্তাহের শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবারে এসে সূচক কিছুটা কমলেও লেনদেন নেমে এসেছে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে। এতে কয়েকদিন সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধির ফলে শেয়ারে যে মুনাফা হয়েছে, তা বিনিয়োগকারীরা শেষ দিনে এসে সংগ্রহ করেছেন। সেই সঙ্গে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ অপেক্ষায় তুলে নেয়া টাকা হাতে রেখে দিয়েছেন। ফলে মুনাফা সংগ্রহে সূচক কমলেও পুনরায় বিনিয়োগ না করায় লেনদেন কমেছে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।বাজার চিত্রে দেখা যায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর লেনদেন ছিল ৪৭১ কোটি টাকার। এরপর লেনদেন কমতে থাকে ডিএসইর। ২৬ ফেব্রুয়ারি লেনদেন নেমে আসে ২৩১ কোটি টাকায়। পরে আবার লেনদেন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এতে ২৮ ফেব্রুয়ারি এক লাফে ডিএসইর লেনদেন ৪২০ কোটি টাকা হয়। পরবর্তীকালে লেনদেন আরও বেড়ে সবশেষ ৬ মার্চ ৭২৭ কোটি টাকায় পৌঁছায়। কিন্তু এরপর আবার সূচক ও লেনদেন কমতে থাকে। এতে লেনদেন ৭ মার্চ কমে ৬৪৯ কোটি এবং গতকাল ৯ মার্চ ৫৪৫ কোটি টাকায় নামে।এদিকে সূচক ও লেনদেন কমে বাজারে যখন মন্দা অবস্থা চলছে, তখন ১ মার্চ নিয়ন্ত্র্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বছর ২১ ডিসেম্বর তুলে নেয়া ১৬৯টি কোম্পানিতে পুনরায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। এতে সেদিন থেকেই লেনদেনে বড় চমক দেখা যায়। এর প্রায় এক মাস পর লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। কিন্তু তা সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। কারণ সপ্তাহের শেষ দিনে এসে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা সংগ্রহ করেছেন এবং টাকা তুলে নতুন বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের সপ্তাহের শেষ দিকে এসে লেনদেন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পরে এ মাসের প্রথম দিনে বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তে তা আরও বেড়ে যায়। কারণ ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার ফলে অনেকে বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত সেই শেয়ারের মধ্যে বেশিরভাগের দাম একটু একটু করে কমে যাচ্ছিল। তাই অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু যখন এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং পুনরায় আলোচ্য কোম্পানি ফ্লোর প্রাইস আসতে পারে বলে সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখনই বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করে আর বিএসইসির সিদ্ধান্তে তা আরও ভালো অবস্থানে যায়।তারা বলেন, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ সময়ে বিনিয়োগে আগ্রহী না। তারা স্বল্প সময়ে মুনাফা তুলে নিতে চান। তাই গত কয়েকদিনে শেয়ারে যে মুনাফা হয়েছে তা সপ্তাহের শেষ দিনে এসে তুলে নিয়েছেন অনেকে। তারা সপ্তাহের শুরুতে কোন কোন শেয়ারে বিনিয়োগে ভালো মুনাফা হতে পারে, সে বিবেচনায় আগামী সপ্তাহে বিনিয়োগ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তাই মুনাফা সংগ্রহ করলেও বিনিয়োগ হয়নি অনেক টাকা আর এতে লেনদেন কমেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।গতকাল বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে ৫৪৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৬৪৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৬০ দশমিক ১৭ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৬ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৬২ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৪৭টি এবং কমেছে ১১৩টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১৬৮টির।অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবসে ২০ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৪৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটদর বেড়েছে ৩৯টির, কমেছে ৪৬টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৬৪টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৫০ দশমিক ১৫ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচক ২ দশমিক ৬১ পয়েন্ট ও সিএসআই দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ৫৯ দশমিক ৯১ পয়েন্টে ও ১ হাজার ১৬১ দশমিক ২০ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক দশমিক ৪৪ পয়েন্ট ও সিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩২৩ দশমিক ৯১ পয়েন্টে ও ১৩ হাজার ৩৫২ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে।