মূল্যস্ফীতির চাপে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে!

Date: 2023-03-26 10:00:19
মূল্যস্ফীতির চাপে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে!
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা দুই সপ্তাহ ধরে সূচক ও লেনদেনের পতন হয়েছে। প্রথম সপ্তাহে অপর পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) পতন হলেও গত সপ্তাহে উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রভিশন রাখার সময় বৃদ্ধি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সিদ্ধান্ত আসার পরও বাজারের এমন চিত্র নিয়ে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা। ফলে তারা শেয়ার বিক্রি করে নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন এবং আর বিনিয়োগ করছেন না। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবংবাজারের অনিশ্চিত ভবিষতের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ বিমুখ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি ৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৫৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৭৭৮ কোটি ৭ লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৫০৮ কোটি ২ লাখ টাকা। সপ্তাহে ডিএসইর সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২১৫ দশমিক ৩০ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক দশমিক ৭৪ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ২১৮ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৫৩ দশমিক ২৫ পয়েন্টে।আগের সপ্তাহে ডিএসইতে ২ হাজার ৫৪০ কোটি ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তার আগের সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৫৮৪ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে ৪৪ কোটি ৮৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার বা ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ লেনদেন কমেছে।ডিএসইতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইতে সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৯ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ৬ হাজার ২২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আলোচ্য সপ্তাহে বাজার মূলধনের শীর্ষ ৩০ কোম্পানির মূল্যসূচক ডিএস৩০ আগের সপ্তাহের চেয়ে ৮ দশমিক ২১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২১৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপরদিকে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ৫ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৪০ শতাংশ কমেছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির সিদ্ধান্তের পরও স্বল্প সময়ে লাভের আশায় এবং বিনিয়োগ করে শেয়ারে আটকে থাকার থেকে নগদ হাতে রাখতে আগ্রহী বেশি। সেই সঙ্গে বর্তমানে দেশের সার্বিক অর্থনীতি ঝুঁকি, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত থাকায় বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। এতে দীর্ঘ সময়ে বাজারে বিনিয়োগ করে অবস্থান নেয়ার পরিবর্তে তারা বেশি নগদ টাকা হাতে নিয়ে অবস্থানে থাকছেন। ফলে সপ্তাহ জুড়ে কেনাবেচা উভয় দিকে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় থাকার কারণে বাজার অস্থির ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সপ্তাহের শেষে বিক্রেতাদের প্রভাব বেশি ছিল বলে জানান তারা।তারা বলেন, টানা দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজার নেতিবাচক অবস্থায় শেষ হয়েছে; কারণ বিনিয়োগকারীরা প্রধান প্রধান খাতগুলোতে বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই হতাশ এবং বিনিয়োগ করতে অনিচ্ছুক ছিল। এতে বিনিয়োগকারীরা সপ্তাহজুড়ে বাজারে তাদের অংশগ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।অপরদিকে সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৬৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৭ কোটি ১ লাখ টাকা বা ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তালিকাভুক্ত ২৭৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৪২টির, দর কমেছে ৪৫টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮৯টি কোম্পানির।সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই৫০ সূচক দশমিক ২১ শতাংশ, সিএসই৩০ সূচক দশমিক ২২ শতাংশ, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক ১২ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৩২৩ দশমিক ৩০ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৬৪ দশমিক ১৩ পয়েন্টে, ১১ হাজার ১৪ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৫৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে।

Share this news