মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখিতায় যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে দরপতন

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে দেশটির পুঁজিবাজারে সূচকের পতন হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপের পুঁজিবাজার গত সপ্তাহে ইতিবাচক প্রবণতায় শেষ হয়েছে। তবে মিশ্র প্রবণতা দেখা গিয়েছে এশিয়ার পুঁজিবাজারে। ভারত ও ভিয়েতনামের পুঁজিবাজারে পয়েন্ট যোগ হলেও নিম্নমুখী ছিল চীন ও জাপানের পুঁজিবাজার।ইউরোপের অন্যতম পুঁজিবাজার যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক গত শুক্রবার ১২ দশমিক ২২ পয়েন্ট ও জার্মানির ব্লুচিপ সূচক ডিএএক্স সূচক ১৩৮ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বেড়েছে। একই সময়ে ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক বেড়েছে ৮৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া, নরওয়ে, হাঙ্গেরি, স্পেন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া ও সুইডেনের পুঁজিবাজারও এ সময়ে পয়েন্ট বেড়েছে।গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক ১ দশমিক ৭১ শতাংশ বা ৫০০ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমেছে। একই সময়ে দেশটির এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বা ৫৪ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট ও নাসডাক সূচক ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বা ১৬১ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট হারিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এ অঞ্চলের কানাডা, ভেনিজুয়েলা, মেক্সিকো, কোস্টারিকা, পানামা ও কলম্বিয়ার পুঁজিবাজারের সূচক কমেছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত সেপ্টেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দশমিক ৩ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতির কারণে সামনের দিনগুলোয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার আরো বাড়ানোর দিকে ঠেলে দিতে পারে। এরই মধ্যে বেশ কয়েক দফায় ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়েছে। এ বছরের তিন প্রান্তিকে ওয়াল স্ট্রিটে সূচকের দরপতন হয়েছে। ইউরোপের পুঁজিবাজারে টানা তিন প্রান্তিক ধরে নিম্নমুখিতা চলছে। যদিও গত শুক্রবার ইউরোপের পুঁজিবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মূলত বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আরো উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতির ফলে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। যদিও গত শুক্রবার ইউরোপের পুঁজিবাজারে অস্থিরতাও দেখা গিয়েছে। এছাড়া ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে নেয়ার কারণে সামনের দিনগুলোতে এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। এর সঙ্গে জ্বালানি ও গ্যাস সংকট তো রয়েছেই। ফলে ইউরোপের বিনিয়োগকারীদের জন্য তেমন কোনো সুখবর দিতে পারছেন না বিনিয়োগ পরামর্শকেরা।গত শুক্রবার ইউরোপের পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান ও যুক্তরাষ্ট্রে বড় পতন হলেও এশিয়া অঞ্চলে মিশ্র প্রবণতা দেখা গিয়েছে। এশিয়ার অন্যতম প্রধান পুঁজিবাজার জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক এদিন ৪৮৪ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট কমলেও ভারতের বিএসই সেনসেক্স সূচক বেড়েছে ১ হাজার ১৬ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট। আর ভিয়েতনামের হ্যাং সেং সূচক ৫৬ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বাড়লেও চীনের সাংহাই সূচক কমেছে ১৬ দশমিক ৮১ পয়েন্ট। এছাড়া এদিন এশিয়া অঞ্চলের দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও শ্রীলংকার পুঁজিবাজারেও দরপতন হয়েছে। তবে পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামসহ এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশের সূচক এদিন বেড়েছে। গত শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্যের পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গিয়েছে। এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, মাল্টা, লেবানন ও কুয়েতের পুঁজিবাজারের প্রধান সূচকগুলো বেড়েছে।দেশের পুঁজিবাজার: গত সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫১ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৮ শতাংশ কমেছে। সূচকটির বর্তমান অবস্থান ৬ হাজার ৫১৩ পয়েন্টে। অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমে ২ হাজার ৩৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৮ শতাংশ কমে ১ হাজার ৪২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৮০ শতাংশ কমে ১৯ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক ৮১ শতাংশ কমে ১১ হাজার ৫০২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৯টির, কমেছে ১২৬টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩২টির।