মন্দায়ও ইতিবাচক মুনাফায় বেক্সিমকোর তিন কোম্পানি
সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে চলছে দারুণ মন্দাভাব। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ভর করে চলেছে নেতিবাচক প্রবণতা। অর্থনৈতিক নেতিবাচক এই পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের বড় বড় কয়েকটি কোম্পানি ব্যবসায় ইতিবাচক প্রবণতা বজায় রেখে চলেছে। এরমধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের তিন কোম্পানি-বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকস অন্যতম।সদ্য সমাপ্ত ৩০ জুন, ২০২২ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় কোম্পানি তিনটি সম্পর্কে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।প্রবৃদ্ধির দিক থেকে কোম্পানি তিনটির মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেড অনেক এগিয়ে রয়েছে। তবে বেক্সিমকো ফার্মা ততোটা এগুতে না পারলেও ভবিষ্যতে কোম্পানিটির আশার বড় বার্তা রয়েছে।বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোম্পানিগুলোর মুনাফা, ক্যাশ ফ্লো ও সম্পদ মূল্যে ইতিবাচক প্রবণতা থাকলে গত কয়েকদিন যাবত কোম্পাগুলোর শেয়ার দরে বেশ নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। কোম্পানি তিনটির মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেড ১৬০ টাকা থেকে কম বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস ১১৫ টাকা ৬০ পয়সার কাছাকাছি লেনদেন হচ্ছে। বেক্সিমকো ফার্মা ২৫০ টাকা থেকে কমে ১৬৩ টাকার ঘরে লেনদেন হচ্ছে। শাইনপুকুর সিরামিকসও ৫৮ টাকা থেকে কমে ফ্লোর প্রাইস ৪৩ টাকার কেনাবেচা হচ্ছে।বেক্সিমকো লিমিটেড৩০ জুন, ২০২২ অর্থবছরে বেক্সিমকো লিমিটেড ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আগের অর্থবছরে কোম্পানির মুনাফা ছিল ৬৬০ কোটি টাকা।এতে দেখা যায়, সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১৪ টাকা ৩২ পয়সা। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৭ টাকা ৫৩ পয়সা।সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ৩০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। যা আগের বছর ছিল ৩৫ শতাংশ। এই বিষয়ে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ বলছে, কোম্পানিটির রিজার্ভের ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য এবছর বড় মুনাফার পরও ডিভিডেন্ড কম দেওয়া হয়েছে।সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ১ টাকা ৫৬ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ২ টাকা ০৩ পয়সা (নেগেটিভ)। অর্থাৎ আগের বছর ক্যাশ ফ্লো নেগেটিভ থাকলেও এবছর তা পজিটিভ হয়েছে।৩০ জুন, ২০২২ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য হয়েছে ৯১ টাকা ১৯ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭৮ টাকা ২৮ পয়সা। আগের বছরের তুলনায় সম্পদ মূল্য বেড়েছে ১২ টাকা ৯১ পয়সা। সম্পদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৪৯ শতাংশ।অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে বেক্সিমকো লিমিটেডের মুনাফা, ক্যাশ ফ্লো ও সম্পদ মূল্যে বড় উল্লম্ফন হয়েছেবেক্সিমকো ফার্মাবাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মা প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মৌখিক ওষুধ ‘মালনুপিরাভির’ উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে।এছাড়াও, ২০২১ সালের এপ্রিলে কোম্পানিটি ৪০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানি সানোফি বাংলাদেশের ৫৪.৬০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে।সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড যা পরবর্তীতে সিনোভিয়া ফার্মা পিএলসি নামকরণ করা হয়। কোম্পানিটি গত ১ এপ্রিল উৎপাদনে যায়।যে কারণে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বেক্সিমকো ফার্মার আয়ে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। তারপরও কোম্পানিটির মুনাফা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। সিনোভিয়া ফার্মা এবছর উৎপাদনে আসায় আগামী অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডাররা আশার আলো দেখছেন।সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির মুনাফা হয়েছে ৫১৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। যা আগের বছর ছিল ৪৯৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।এতে দেখা যায়, সমাপ্ত অর্থবছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১১ টাকা ৫৭ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ১১ টাকা ০৯ পয়সা।কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট ওষুধ রপ্তানির ২২ শতাংশই রফতানি করছে বেক্সিমকো ফার্মা।কোম্পানিটি এবছর বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আগের বছরও লভ্যাংশ ছিল ৩৫ শতাংশ।সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ১১ টাকা ৬৯ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ১৩ টাকা ৫০ পয়সা। কোম্পানিটির ক্যাশ ফ্লো কমলেও এই ক্যাশ ফ্লো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।৩০ জুন, ২০২২ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য হয়েছে ৯১ টাকা ০১ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮৩ টাকা ০১ পয়সা। অর্থাৎ সম্পদ মূল্য বেড়েছে ৮ টাকা বা ৯.৬৩ শতাংশ।শাইনপুকুর সিরামিকসসমাপ্ত অর্থবছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩৯ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ৩২ পয়সা।কোম্পানিটি এবছর বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছরও একই পরিমাণ ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ছিল।সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ১ টাকা। যা আগের বছর ছিল ১০ পয়সা। ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে ৯০ পয়সা।৩০ জুন, ২০২২ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য হয়েছে ৩১ টাকা ৫৩ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩০ টাকা ৬৩ পয়সা। অর্থাৎ সম্পদ মূল্য বেড়েছে ৯০ পয়সা বা ২.৯৩ শতাংশ।