মন্দা পুঁজিবাজারের ধাক্কা ডিএসইর শীর্ষ দশ কোম্পানিতেও

Date: 2024-06-18 01:00:07
মন্দা পুঁজিবাজারের ধাক্কা ডিএসইর শীর্ষ দশ কোম্পানিতেও
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন গত ১৩ জুন লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায়। এর মধ্যে সরকারি ট্রেজারি বন্ডের অংশ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা।আর পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোর বাজার মূলধন ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই বাজার মূলধনের ৩৮ শতাংশের বেশি দখলে রয়েছে শীর্ষ স্থানীয় ১০ কোম্পানির দখলে। তবে পাঁচ মাস আগে ফ্লোর প্রত্যাহারের দিন এ কোম্পানিগুলোর দখলে ছিল ৪১ শতাংশেরও বেশি বাজার মূলধন।জানা যায়, গত ১৩ জুন শেষে পুঁজিবাজারের শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা বর্তমানে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোর মোট বাজার মূলধনের ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে সর্বশেষ বেশির ভাগ কোম্পানির ফ্লোর প্রত্যাহারের আগে অর্থাৎ গত ১৮ জানুয়ারি শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যা মোট ইকুইটি শেয়ারের বাজার মূলধনের ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ হিসেবে টাকার পরিমাণে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারের শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাজার মূলধন কমেছে ৫৯ হাজার কোটি টাকা বা ৩১ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে মোট ইকুইটি শেয়ারের বাজার মূলধনে শীর্ষ ১০ কোম্পানির অবদান কমেছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বড় ও মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোতে বাজার মূলধন তুলনামূলক বেশি পতন হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। এমনকি প্রচুর বিক্রেতা থাকলেও এক পর্যায়ে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে শীর্ষ কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রত্যাহারের অধির আগ্রহে ছিল বিক্রেতারা। অবশেষে ফ্লোর প্রত্যাহার হওয়ায় শীর্ষ স্থানীয় কোম্পানিগুলোতে অতিরিক্ত বিক্রির চাপে প্রতিনিয়ত দরপতন হয়। এতে ওইসব কোম্পানির বাজার মূলধন বড় ধরনের ধাক্কার সম্মুখীন হয়।গত বছরের মতোই চলতি বছরের প্রথম কার্যদিবসে দরপতনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশের পুঁজিবাজারের। যদিও ২০২২ সালের শুরুতে বেশ আশা জাগিয়েছিল দেশের পুঁজিবাজারের পারফরম্যান্স। তবে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকেই উত্তপ্ত বৈশ্বিক পরিস্থিতির আঁচ লাগে দেশের পুঁজিবাজারেও। পুরো ২০২৩ সালজুড়েও ছিল হতাশাজনক পারফরম্যান্স। এ সময় পুঁজিবাজারে সূচকের ওঠানামা সীমাবদ্ধ ছিল ২০০ পয়েন্টে এবং আগের বছরের তুলনায় দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারদরের নিম্নসীমা) আরোপ হলে বাজারে থাকা শেয়ারের বড় একটি অংশই লেনদেন হয়নি এবং এতে তারল্যপ্রবাহ কমে যায়। এ সময় ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন ছিল মোট বাজার মূলধনের (ডেট সিকিউরিটিজ বাদে) প্রায় ৬০ শতাংশ।এ বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশা ছিল সংশ্লিষ্টদের। যে প্রত্যাশার ওপর ভর করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়। এতে বড় দরপতনের শঙ্কা থাকলেও শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছিল। যদিও সেটি খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই নিম্নমুখী হতে শুরু করে পুঁজিবাজার, যার প্রভাব এখনো বিদ্যমান। এতে অধিকাংশ দিনগুলোতেই বাজার মূলধন কমছে।এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, বাজার মূলধন সিকিউরিটিজের মূল্য ও লেনদেনের ওপর নির্ভর করে। বেশকিছু সময় ধরে পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম ও লেনদেন কমছে। ফলে বাজার মূলধনও কমে গেছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণেও বাজার মূলধন কমেছে। তবে এখন যেহেতু ফ্লোর প্রাইস আর নেই তাই ধীরে ধীরে বাজার মূলধন বাড়বে বলে আশা করছি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তার এ যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকব। এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে বাজার মূলধন অনেক বেড়ে যাবে।শীর্ষ ১০ কোম্পানির কার কত বাজার মূলধনগ্রামীণফোন: দেশের পুঁজিবাজার বাজার মূলধন বিবেচনায় বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে গ্রামীণফোন লিমিটেড। বহুজাতিক কোম্পানিটির বাজার মূলধন রয়েছে ৩০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। যা ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ৩৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তখন ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ছিল এ কোম্পানির দখলে।স্কয়ার ফার্মা: ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ দখলে নিয়ে বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ১৩ জুন শেষে এ কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭২৯ কোটি টাকায়। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শেষে যা ছিল ১৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। তখন ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে কোম্পানিটির অবদান ছিল ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।বিএটিবিসি: তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) লিমিটেডের বাজার মূলধন বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে যার অবদান ৫ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ১৮ জানুয়ারি শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ২৮ হাজার ১০ কোটি টাকায়। তখন ডিএসইর বাজার মূলধনে কোম্পানির অবদান ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।ওয়ালটন: গত ১৩ জুন শেষে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকায়। ডিএসইর বাজার মূলধনে কোম্পানিটির অবদান ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। গত ১৮ জানুয়ারি ৩১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে কোম্পানিটির অবদান ছিল ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ।রবি: বাজার মূলধন বিবেচনায় ডিএসইর পঞ্চম কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেড। গত ১৩ জুন শেষে কোম্পানির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকায়। ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে যার অবদান ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শেষে ১৫ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে কোম্পানির অবদান ছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।বেক্সিমকো: ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ দখলে নিয়ে তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে শুধুমাত্র বেক্সিমকো এখনো ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। তাই এর বাজার মূলধন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থির রয়েছে। বর্তমানে কোম্পানির বাজার মূলধন রয়েছে ১০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি কোম্পানিটি একই পরিমাণ বাজার মূলধন নিয়ে তালিকায় অষ্টম অবস্থানে ছিল। তখন ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে কোম্পানির অবদান ছিল ২ দশমিক ২৮ শতাংশ।বার্জার: ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বাজার মূলধন নিয়ে তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। বর্তমানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন রয়েছে ৮ হাজার ২৩ কোটি টাকা। গত ১৮ জানুয়ারি শেষে কোম্পানির বাজার মূলধন ছিল ৮ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকায়। তখন ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে কোম্পানির অবদান ছিল ১ দশমিক ৯০ শতাংশ।রেনাটা: গত ১৩ জুন শেষে রেনাটা লিমিটেডের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে কোম্পানিটির অবদান ২ দশমিক ১০ শতাংশ। গত ১৮ জানুয়ারি শেষে কোম্পানির বাজার মূলধন ছিল ১৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। তখন ডিএসইর বাজার মূলধনে কোম্পানিটির অবদান ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।ইউনাইটেড পাওয়ার: ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ দখলে নিয়ে তালিকায় নবম অবস্থানে রয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার লিমিটেড। বর্তমানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন রয়েছে ৬ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। গত ১৮ জানুয়ারি শেষে এ মূলধন ছিল ১৩ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। তখন ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে কোম্পানির অবদান ছিল ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ।লাফার্জ হোলসিম: বাজার মূলধনে শীর্ষ ১০ কোম্পানির সবচেয়ে নিচে রয়েছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড। গত ১৩ জুন শেষে কোম্পানির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। যা ডিএসইর মোট বাজার মূলধনের ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। গত ১৮ জানুয়ারি ৮ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে কোম্পানির অবদান ছিল ১ দশমিক ৮২ শতাংশ।

Share this news