মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রতারণা, প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি

Date: 2023-10-30 06:00:06
মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রতারণা, প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি
গত ১৪ অক্টোবর শেয়ারনিউজে ‘উৎপাদনের নামে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতারণা!’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শেয়ারদর বাড়িয়েছে। উৎপাদনের ইতিবাচক খবরে বিনিয়োগকারীরা চড়া দামে কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কোম্পানিটি উৎপাদন শুরু করেনি। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারদর নেমে যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।শেয়ারনিউজরে ওই সংবাদের পর সংবাদটির সত্যতা খুঁজতে উদ্যোগী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠানটি এই বিষেয় জরুরী ভিত্তিতেএকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।এরপর তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজের শ্রীপুর কারখানা পরিদর্শন করেন। তাঁরা দেখতে পান, টেকনো ইকোনমি লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজের যন্ত্রপাতি এবং কারখানা ব্যবহার করছে এবং টেকনো ইকোনমির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন, ইউটিলিটি বিল এবং প্রশাসনিক খরচও বহন করছে মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজ।বিএসইসি নিয়ম অনুযায়ি, যেকোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে তার অফিস স্পেস বা ফ্যাক্টরি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার আগে এই সংক্রান্ত তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানাতে হয়। কিন্তু কোম্পানিটি তা করেনি। বরং শেয়ারনিউজে নিউজ প্রকাশের পর তা জোরালোভাবে প্রতিবাদ করে এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জানায়, কোম্পানিটি উৎপাদনে রয়েছে।যাহোক, বিএসইসি পরিদর্শন দলের তদন্ত দল গত সপ্তাহে তাদের কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘টেকনো ইকোনমি কোম্পানিটি একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির সম্পদ ইচ্ছামতো ব্যবহার করছে তাদের নিজস্ব অপারেশনাল সুবিধার জন্য।প্রতিবেদনে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় এবং যাবতীয় অনিয়ম উদঘাটনের জন্য গত ১০ বছরে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের একটি বিশেষ অডিট পরিচালনা করার সুপারিশ করা হয়।এছাড়া, তদন্ত প্রতিবেদনে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেন কার্যক্রমের তদন্তের জন্য একটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনেরও পরামর্শ দেওয়া হয়। যার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।এদিকে, বিএসইসি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ গত ২৬ অক্টোবর স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে জানায়, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে গত ১ অক্টোবর থেকে টেকনো ইকোনমি লিমিটেডকে টেপ এবং কাপড় প্রক্রিয়াকরণ কাজ পরিচালনার জন্য মিরাকলের কারখানা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে।এই বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর, কোনো আইন ভঙ্গ হয়েছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য আমরা শুনানি করি। শুনানির ভিত্তিতে কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’বিএসইসির মুখপাত্র আরও বলেন, যদি কেউ আইন ভঙ্গ করেছে বলে প্রমাণিত হয়, তবে কমিশন লঙ্ঘনের তীব্রতা এবং বিনিয়োগকারীদের হারানো অর্থের পরিমাণের উপর নির্ভর করে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা থেকে সীমাহীন পরিমাণ জরিমানা ধার্য্য করতে পারে।১৯৯৫ সালে বিসিআইসি এবং চারজন উদ্যোক্তার যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ সিমেন্ট, সার, লবণ, ফিড, চিনি, খাদ্যশস্য এবং রাসায়নিকের জন্য বিভিন্ন ব্যাগ তৈরি করে। এটি শ্রীপুর এবং গাজীপুরে দুটি উৎপাদন ইউনিট পরিচালনা করে। একটি স্থানীয় বাজারের জন্য এবং একটি রপ্তানির জন্য।লক্ষণীয়ভাবে, অ-তালিকাভুক্ত টেকনোর ব্যবসায়িক কর্মকান্ড মিরাকলের ব্যবসার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। টেকনোর কারখানাটি মিরাকলের সীমানার পাশেই অবস্থিত।এবছর মিরাকলের মালিকানায় পরিবর্তন এসেছে। মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের চারটি প্রাইভেট স্টেকহোল্ডার মিরাকলের তাদের সম্পূর্ণ শেয়ার (১০ শতাংশ) মেহমুদ ইক্যুইটিজ নামে একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছে।মজার বিষয় হল, মেহমুদ ইক্যুইটিজ একটি কোম্পানি যা এখন মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এছাড়াও টেকনো ইকোনমির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক।এই বিষয়ে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব মোঃ ওমর ফারুক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মালিকানা পরিবর্তনের পর, মিরাকল কাজ নিশ্চিত করার জন্য বেশ কয়েকটি টেন্ডারে অংশ নিয়েছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল। টেকনো ইকোনমি ফ্যাক্টরিটি মিরাকলের পাশেই রয়েছে। কারখানা এবং টেকনো এখন একটি উপ-কন্ট্রাক্টর চুক্তির মাধ্যমে মিরাকল কারখানায় কাজ করছে। তিনি বলেন, মিরাকলের কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। কিন্তু এটি এখন টেকনোর পণ্য উৎপাদনের জন্য ছোট পরিসরে কাজ শুরু করেছে। যেহেতু দুটি কোম্পানি একই প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন, তাই আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।ওমর ফারুক বলেন, ‘টেকনো ইকোনমিকে যন্ত্রপাতি এবং কারখানার প্রাঙ্গণ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পাবে।’

Share this news