মার্জিন পুর্নগঠনের মাধ্যমে ফ্লোর প্রাইস উঠালে ঘুরতে পারে শেয়ারবাজার
![মার্জিন পুর্নগঠনের মাধ্যমে ফ্লোর প্রাইস উঠালে ঘুরতে পারে শেয়ারবাজার](https://stocknewsbd.s3.ap-southeast-1.amazonaws.com/5586/share-market.2020-2.jpg)
বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষা এবং শেয়ারবাজারে বড় পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস বেধে দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর বাজার কিছুটা ভালো হলেও ক্রমাগত কমতে থাকে লেনদেনের পাশাপাশি সূচকও। ফ্লোর প্রাইসে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর নেমেছে মিছিল ধরে। যার কারণে আতঙ্কিত হতে থাকে বিনিয়োগকারীরা।এতে করে বিনিয়োগকারীরা ক্রমাগত নিজেদেরকে বাজার থেকে গুটিয়ে নিয়েছে। তবে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর উচ্চ লেভেলে কেনা এবং বাজারের পতনে শেয়ার দর কমে যাওয়া বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই এসব শেয়ার নিয়ে আটকে আছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে অনেক কোম্পানির মিলছে না ক্রেতা। আবার ক্রেতা মিললেও অনেকে বেশি লোকসান হওয়ায় শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না।আবার মার্জিন ঋণের মাধ্যমে অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমার কারণে মার্জিন ঋণে থাকা বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি আতঙ্কে। কারণ মাঝে মধ্যেই বাজারে শোনা যায় ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার খবর।কিন্তু ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে ফ্লোরে আটকে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে বড় পতন হতে পারে। এতে করে মার্জিনে থাকা বিনিয়োগকারীরা ফোর্স সেলে পড়তে পারেন। আর এই মুহুর্তে বাজারে ফোর্স সেল বৃদ্ধি পেলে বড় আকারের ধ্বস নামতে পারে-এমন শঙ্কা বিনিয়োগকারীদের। যা ইতোমধ্যে তাঁদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।কিন্তু মার্জিন ঋণ পুর্নগঠন করে ফ্লোর প্রাইস উঠালে সেল প্রেসারের জায়গায় বাই প্রেসার তৈরী হতে পারে। আর সেলের প্রেসারের চেয়ে বাই প্রেসার থাকলে বাজার এমনিতেই ঘুরে দাঁড়াবে। আর বাজার একবার ঘুরে দাঁড়ালে বিনিয়োগকারীদের মাঝ থেকে আতঙ্ক কেটে যাবে। সাহস ও বিশ্বাস বাড়বে। যার মাধ্যমে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে-এমনটাই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা ও বিনিয়োগকারীরা।এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসা শিক্ষা অনুষদভুক্ত মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান শেয়ারনিউজকে বলেন, আমার মনে হয় না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) রাতারাতি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিবে। আর যদিও ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তার আগে বিএসইসিকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথমত, বাজারের তারল্য বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে করে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেলেও বাজারকে সাপোর্ট দেওয়া যায়। আর বাজারের জন্য সে তারল্য সরকারের বিভিন্ন মাধ্যম থেকেও হতে পারে।শেয়ারবাজার এই বিশ্লেষক আরও বলেন, মার্জিন ঋণ রেশিও বৃদ্ধি করেও বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার সুযোগ দেওয়া যায়। এতে বাজারে সেল প্রেসার কমবে। আর সেল প্রেসার কমলে বাজার নিজস্ব গতি ফিরে পাবে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের মাঝে ইতোমধ্যে তৈরি আতঙ্ক কেটে যাবে। আর বিনিয়োগকারীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরে এলেই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ এই বিষয়ে শেয়ারনিউজকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া খুবই জরুরী। কারণ ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ারবাজার এখন প্রায় মৃত। এই ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলেই কেবল বাজার তার নিজস্ব গতি ফিরে পাবে।তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারের ১৬৮টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে শেয়ার দর কমার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার বেধে দিয়েছে। এই উদ্যোগ বাজারের কোন উপকারে আসেনি। তাই শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইসকেই তুলে দেওয়াই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শেয়ার দর কমার ক্ষেত্রে প্রথমে আড়াই শতাংশ এবং পরে ৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার বেধে দিলে তা শেয়ারবাজারের জন্য ভালো কাজে দিবে বলে তিনি মনে করেন।তবে মার্জিন রেশিও বৃদ্ধি বিষয়টি সমর্থন করেন না শেয়ারবাজারের এই বিশ্লেষক। তিনি বলেন, এমনিতেই ফ্লোর প্রাইসে বিনিয়োগকারীরা আট মাস ধরে আটকে আছে। এতে করে যাদের মার্জিন ঋণ রয়েছে তারা অনেক বেশি চাপে রয়েছে। আবারও মার্জিন বৃদ্ধি করলে ওই সকল বিনিয়োগকারী তো মারা যাবে।তবে শেয়ারনিউজকে একাধিক বিনিয়োগকারী বলেছেন, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের আগে যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা মার্জিন রেশিও ১:১ থেকে বৃদ্ধি করে অন্তত ১:১.৫০ না করে, তাহলে বাজারে ফোর্স সেল বাড়বে। আর মার্জিন ঋণ না বাড়ালে ফোর্স সেল ঠেকানোর কোনো উপায় থাকবে না। তারা বলছেন, এর আগেও মার্জিন রেশিও ১:২ ছিল। এখনতো শেয়ারের দাম তলানিতে। এখন যদি মার্জিন রেশিও বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে মার্জিন ঋণ দাতাদের কোনো রকম ঝুঁকি হবে না।বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মার্জিন রেশিও সহনীয় পর্যায়ে বাড়ালেই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ এতে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। ক্রয় ক্ষমতা বাড়লে বাজারে সেল প্রেসার মোকাবেলা করার সক্ষমতা তৈরি হবে। এতে বাজার নিজস্ব গতি ফিরে পাবে। তাঁদের মতে, বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরলে বাজার আর পেছনে যাবে না। কারণ বাজার পেছনে যাওয়ার জায়গা নেই। যদিও সামনে যাওয়ার বিশাল জায়গা রয়েছে।