লভ্যাংশের চমক দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের কতল!
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি জেমিনী সী ফুডস লিমিটেড ৩০ জুন, ২০২২ অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ এবং ৩০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গত চার বছরের মধ্যে এটি কোম্পানিটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ।এর আগে ২০১৮ সালে কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ, ২০১৯ সালে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ, ২০২০ সালে ‘নো ডিভিডেন্ড’ এবং গত বছর ২০২১ সালে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এবার দিয়েছে ১০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস মিলে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ।তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, আড়াই বছর আগে শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ দেশের শেয়ারবাজারে প্রথম ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল। তখন জেমিনি সী ফুডের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ১৪৪ টাকা ৩০ পয়সায়। ফ্লোর প্রাইসে ২০২১ সালের ৭ জুন পর্যন্ত এক বছর তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার ঠায় দাঁড়িয়েছিল।২০২১ সালের ৮ জুন থেকে ফ্লোর প্রাইস থেকে হঠাৎ কোম্পানিটির শেয়ার জেগে উঠে। এরপর টানা উত্থান। ১১ মাসের মাথায় চলতি বছরের ৪ এপ্রিল শেয়ারটির দাম ১৪৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৫৪০ টাকায় উঠে যায়। তারপর কিছুটা সংশোধন হয়। দেড় মাসের মাথায় ২৬ মে শেয়ারটির দাম ২৯৬ টাকার নিচে নেমে আসে। তারপর প্রায় একই জায়গায় দুই মাসের পূর্ণ বিরতি। এরপর ফের উত্থান। গত কয়েকদিনে শেয়ারটি যেন নতুন জোয়ার পায়। টানা বাড়তে থাকে। এরমধ্যে একাধিক কার্যদিবস সর্বোচ্চ দরে ক্রেতাশুন্যও থাকে। বুধবার (১৯ অক্টোবর) শেয়ারটি দাম ৫৯৩ টাকা ৪০ পয়সায় ক্রেতাশুন্য থাকে। যা কোম্পানিটির রেকর্ড সর্বোচ্চ দর।আজ স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কোম্পানিটির লভ্যাংশ ঘোষণার খবর আসে। লভ্যাংশের চমকে দিনের শুরুতে শেয়ারটির দরে বড় লাফ দেখা যায়। তারপর কারসাজিকারিদের পরিকল্পিত সেল। গত দুই বছরের মধ্যে ডিএসইতে আজ কোম্পানিটির সর্বোচ্চ রেকর্ড লেনদেন হয়েছে। গত দুই বছরে কোম্পানিটির শেয়ার যেখানে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজারের নিচে, আজ সেখানে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ২৮ হাজার শেয়ার। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। এটি কোম্পানিটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ টাকার লেনদেন।এছাড়া, আজ কোম্পানিটিরশেয়ার দরে যে উত্থান-পতন হয়েছে, তাও কোম্পানিটির ইতিহাসে সেরা। এর আগে কোম্পানিটির শেয়ার দরে এমন আকাশ-পাতাল উত্থান-পতন দেখা যায়নি। আজ কোম্পানিটির শেয়ার প্রথমভাগে ৫৩৮ টাকা ৯০ পয়সায় স্পর্শ করে লেনদেন হয়। পরে সেল প্রেসারে ৪৯৫ টাকা ১০ পয়সায় নেমে যায়। সার্কিট ব্রেকার না থাকায় আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনে ১৪৩ টাকা পার্থক্য দেখা যায়। যা অবশ্যই অস্বাভাবিক। দিনশেষে শেয়ারটির ক্লোজিং প্রাইস হয়েছে ৫০৯ টাকা ২০ পয়সায়।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ারের দরের সঙ্গে বাহারি লভ্যাংশের পরিকল্পিত যোগসাজস রয়েছে। যে কারণে লভ্যাংশের চমক থাকার পরও আকাশে উঠা শেয়ারটি ধপাস করে মাটিতে পড়েছে। যেসব বিনিয়োগকারী লোভে পড়ে শেয়ারটি চড়া দরে কিনেছেন, তারা ভালোভাবেই ধরা খেয়েছেন-এটা এখন নিশ্চিত বলা যায়। কোম্পানিটির শেয়ার কোনো বিবেচনায়ই এমন আকাশচুম্বী দর হতে পারে না বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ লাখ টাকা। বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে নেগেটিভ ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। এছাড়া, ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ লাখ টাকার বিপরীতে কোম্পানিটির ঋণ রয়েছে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। যা মূলধনের প্রায় সোয়া ১০ গুণ।সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১২ টাকা ৪৯ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ৭২ পয়সা।আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ০১ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ৭২ পয়সা।সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য হয়েছে ১৩ টাকা ১০ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ৯৩ পয়সা। অর্থাৎ ১৩ টাকার সম্পদের শেয়ার বিকিকিনি হচ্ছে ৫০৯ টাকায়।কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ০৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ নভেম্বর।