শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রায়াত্ব রূপালী ব্যাংক থেকে ৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। ওই ঋণের বিপরীতে ২০ কোটি ৩২ লাখ টাকা সুদসহ ব্যাংকটি গত বছর প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি টাকা দাবি করেছিল। বর্তমানে যা ঋণ সুদ-আসলে মিলে দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি টাকারও বেশি।রূপালী ব্যাংকের ওই সুদ-আসল ঋণের দাবির প্রেক্ষিতে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার বলেছে, কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধ করতে ইচ্ছুক। এই জন্য কোম্পানিটি আসল ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করার সুযোগ চায় এবং বাকি সুদ বাবদ ২৩ কোটি টাকার মওকুফ চায়।রূপালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ি ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে বর্তমানে বেশ আন্তরিক। এরজন্য ব্যাংক সর্বোচ্চ পরিমাণ সুদও মওকুফ করে দিতে প্রস্তুত। তবে সব সুদ মওকুফ করা অনেকটা অসম্ভব।ব্যাংক জানিয়েছে, সুদ মওকুফের বিষয় আজ বুধবারের (০৯ আগস্ট) ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্তের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ বিষয়টি ইতিবাচক হিসাবে বিবেচনা করবে বলে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা শেয়ারনিউজকে আভাস দিয়েছেন।এর আগে গত বছর ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর রূপালী ব্যাংকের সচিব ও মহাব্যবস্থাপক সাহেদুর রহমান স্বাক্ষরে একটি চিঠি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বরাবরে প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে ব্যাংকটি জানায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড ১৯৯৬ সালে রূপালী ব্যাংকের ঢাকার রমনা কর্পোরেট শাখা হতে ৫ কোটি টাকা প্রকল্প ঋণ হিসাবে গ্রহণ করে। কোম্পানিটির এই ঋণ ২০০০ সাল থেকে শ্রেণিকৃত ঋণে পরিণত হয়েছে। ওই ঋণ গত বছর সুদে-আসলে ২৫ কোটি ৩২ টাকায় উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে যা বেড়ে ২৮ কোটি টাকারও বেশি হয়েছে।ওই পত্রের মারফত রূপালী ব্যাংক বিএসইসির চেয়ারম্যানকে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায়। চিঠিতে যারা কোম্পানির পক্ষে ঋণ গ্রহণ করেছিলেন তাদের নামও উল্লেখ করা হয়। ঋণ গ্রহণকারী পরিচালকরা হলেন :-কোম্পানির চেয়ারম্যান শাহনাজ সুলতানা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাজী রাফি আহমেদ ও পরিচালক মো. কাজী নাফিজ আহমেদ।রূপালী ব্যাংকের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ঋণ পরিশোধের বিষয়ে করণীয় বিষয় নির্ধারণ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ দেয়।এর প্রেক্ষিতে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটির ৩ কোটি শেয়ার অভিহিত মূল্যে ইস্যু করার প্রস্তাব দেয়। কোম্পানির প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গত এপ্রিল মাসে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের পরিচালনা পর্ষদের অনুকূলে ৩০ কোটি টাকা মূলধন বৃদ্ধি করার জন্য ৩ কোটি শেয়ার ইস্যু করার অনুমতি দেয় বিএসইসি। তবে নতুন শেয়ার করার ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয়, এই ৩০ কোটি টাকার মধ্যে ২৫ কোটি টাকা রুপালী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবে। বাকি ৫ কোটি টাকা কোম্পানির উৎপাদন কাজে ব্যবহার করবে।এদিকে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসির চেয়ারম্যান রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে অনুরোধ জানায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে কর্মক্ষম করার জন্য বিএসইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে কমিশন রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেরও সহায়তা চায়। বিএসইসি কোম্পানিটির সমুদয় সুদ মওকুফ করে ঋণের আসল টাকা অর্থাৎ ৫ কোটি টাকা নেয়ার ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ জানায়।বিএসইসি এবং লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কোম্পানিটির সুদ মওকুফ করার জন্য আজকের পর্ষদ সভায় প্রস্তাব উঠছে। যদি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ আরোপিত সুদ যতটা মওকুফ করে, কোম্পানিটির জন্য ততটাই আর্শীবাদ হবে বলে মনে করেন কোম্পানিটি সংশ্লিষ্টরা।